ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন রেভারেন্ড ডেভিড ব্রাউন।
কলেজের তিনজন পণ্ডিত হলেন-উইলিয়াম কেরী, রামরাম বসু ও মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার।
উইলিয়াম কেরীর নামে দুটি গ্রন্থ পাওয়া যায়, যথা- ‘কথোপকথন’ (১৮০১) ও ‘ইতিহাসমালা’ (১৮১২)। ‘কথোপকথন’ গ্রন্থ সংলাপের ঢঙে লেখা। গ্রাম্যজীবনের বিবিধ বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন কেরী সাহেব। যেমন-স্ত্রীলোকের কথোপকথন, ভোজনের কথা, হাটের বিষয় ও জমিদার রাইয়ত। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও যুক্তির বাহন হিসেবে বাংলা গদ্যকে তুলে ধরতে গ্রন্থটি তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যদিকে, কেরীর ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নানা অনুবাদমূলক গল্প স্থান পেয়েছে। তবে সবই সরস ও সহজ সরল। আসলে কেরী মানুষকে গল্পের ভাষা আয়ত্ত করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
রামরাম বসুর নামেও আমরা দুটি গ্রন্থ পাই-‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ (১৮০১) ও ‘লিপিমালা’ (১৮০২)। ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম মৌলিক গ্রন্থ। ইতিহাসের প্রতাপাদিত্যকে সামনে রেখে লেখক কল্পনা ও জনশ্রুতিতে এমন এক কাহিনি গড়ে তুলেছেন, যা থেকে গল্পের ভাষা বোঝা যায়। আসলে এইসব গ্রন্থ লেখা হয়েছিল বাঙালিকে এক আদর্শ শিক্ষা দিতে। ‘লিপিমালা’ পত্ররচনার ঢঙে লেখা অনেকগুলি পত্রের সংকলন। যেমন-দক্ষযজ্ঞের কথা, নবদ্বীপে চৈতন্যের কথা ও গঙ্গাবতরণের কথা। পৌরাণিক ঘটনাকে সামনে রেখে কাহিনি গড়ে তুললেও মুনশিয়ানার পরিচয় আছে। তাই সুকুমার সেন বলেছিলেন-“লিপিমালার গদ্যরীতি আরও সহজ এবং মুখের ভাষার বেশ কাছাকাছি।”
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অন্যতম পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার। তাঁর গ্রন্থগুলি হল-‘বত্রিশ সিংহাসন’ (১৮০২), ‘হিতোপদেশ’ (১৮০৮), ‘রাজাবলি’ (১৮০৮) ও ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’ (১৮১৩)। রাজা বিক্রমাদিত্যকে সামনে রেখে মৃত্যুঞ্জয় বত্রিশটি গল্প শুনিয়েছেন ‘বত্রিশ সিংহাসন’ গ্রন্থে। তবে গদ্যের সরসতা সহজেই লক্ষ করা যায়। অতীত ও সেকালের ইতিহাসকে সামনে রেখে লেখক গড়ে তুলেছিলেন ‘রাজাবলি’ গ্রন্থ। সজনীকান্ত দাস এ গ্রন্থ সম্পর্কে লিখেছেন-“বাংলা ভাষার ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম ধারাবাহিক ইতিহাস তাহাতে সন্দেহ নাই।” ব্যাকরণ, অলংকার, ইতিহাস নিয়ে ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’ গ্রন্থ গড়ে উঠেছে। বিদ্যাসাগরের পূর্বে মৃত্যুঞ্জয়ই প্রথম যথার্থ গদ্যশিল্পী,
সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।