ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের তিনজন পণ্ডিতের একটি করে গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো। তিনটি গ্রন্থ সম্পর্কেই সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের তিনজন পণ্ডিত হলেন-উইলিয়াম কেরী, রামরাম বসু ও মৃত্যঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার।

তাঁদের লেখা তিনটি গ্রন্থ হল-

উইলিয়াম কেরী-‘ইতিহাসমালা’,

রামরাম বসু-‘লিপিমালা’ ও

মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার-‘রাজাবলি’।

কেরীর ‘ইতিহাসমালা’ ঠিক ইতিহাস বলতে আমরা যা বুঝি তা নয়, অনেকটা গল্পের ছলে লেখা। তবে প্রশ্নের আখ্যাপত্রে লেখা ছিল-“A collection of stories in the Bengali Language collected from various sources.”। বঙ্গদেশে প্রচলিত নানা গ্রন্থ (পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ)-এর কাহিনিগুলিই তিনি এখানে সহজ-সরলভাবে পরিবেশন করেছেন। যদিও সেদিনের ভাষা সহজ ছিল না। রামরাম বসুর অপর গ্রন্থ ‘লিপিমালা’-তে লেখক পত্ররচনার ঢঙে বাঙালি জীবনের কথা লিখেছেন। পৌরাণিক চরিত্রগুলিকে সামনে রেখে তিনি কাহিনি গড়ে তুলেছেন। দক্ষযজ্ঞের কথা, চৈতন্যের কথা, রাজা পরীক্ষিতের কথা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে বাঙালির ভাষাশিক্ষার পাঠ দিতে চেয়েছেন। এইসব পৌরাণিক ইতিবৃত্তকে তিনি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলেন। বাঙালির চিরাচরিত কাহিনিগুলি বাঙালি আবার গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে নতুন করে স্বাদ গ্রহণ করল। যার পুরো কৃতিত্বই রামরাম বসুর। মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ‘রাজাবলি’ গ্রন্থে ইতিহাসের জগতে ডুব দিয়েছেন। ইতিহাসের নানা ঘটনাবলি ও যুগের চিত্র এনে গ্রন্থটিতে একটি ধারাবাহিক ইতিহাস লেখার চেষ্টা করেছেন। সমালোচক সজনীকান্ত দাস সংগতভাবেই বলেছেন-“বাংলা ভাষার ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম ধারাবাহিক ইতিহাস তাহাতে সন্দেহ নাই।” মুসলিম শাসন থেকে ইংরেজ আমল পর্যন্ত তিনি ইতিহাসের জগতে হেঁটেছেন। বাঙালির ইতিহাস রচনার দিক থেকে গ্রন্থটির মূল্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading