প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার বৈশিষ্ট্য
(ক) ধ্বনিতাত্ত্বিক:
১) ঋ, ঋ, ৯, এ, ঐ-সহ সমস্ত স্বরধ্বনি এবং শ, ষ, স্-সহ সমস্ত ব্যঞ্জনধ্বনিই প্রচলিত ছিল।
২) স্বরাঘাতের স্থানপরিবর্তনের ফলে শব্দের অন্তর্গত স্বরধ্বনির বিশেষ ক্রমানুসারে গুণগত পরিবর্তন হত। পরিবর্তনের তিনটি ক্রম- গুণ বা স্বরধ্বনির অবিকৃতি (স্বপ্> ‘স্বপ্ন’), বৃদ্ধি বা স্বরধ্বনির দীর্ঘিকরণ (স্বপ্> ‘স্বাপ’), এবং সম্প্রসারণ বা স্বরধ্বনি ক্ষীণ হওয়ার ফলে শব্দমধ্যস্থ ঋ, র, ব ধ্বনির স্থানে যথাক্রমে র্, ই, উ-এর আগমন (স্বপ্ > ‘সুপ্ত’-‘ব’ লুপ্ত হয়ে ‘উ’-এর আগমন)।
৩) সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মধ্যে সন্ধিযোগ্য স্থানে প্রায় সর্বত্র সন্ধি অপরিহার্য ছিল।
৪) স্বরাঘাতের প্রচলন ছিল। বৈদিক স্বর ছিল তিন প্রকার-উদাত্ত, অনুদাত্ত এবং স্বরিত।
৫) যুক্তব্যঞ্জনের স্বচ্ছন্দ ব্যবহার প্রচলিত ছিল। যেমন ক্র, ক্ল, ক্ত, জ্ব, ক্ষ্ম, র্ম, র্দ্ধ ইত্যাদি।
(খ) রূপতাত্ত্বিক:
১) মূল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার তিনটি বচন প্রচলিত ছিল- একবচন, দ্বিবচন, বহুবচন। বচনভেদে ধাতুরূপ ও শব্দরূপের পার্থক্য ঘটত।
কারক ছিল আটটি- কর্তৃ, কর্ম, করণ, সম্প্রদান, অপাদান, অধিকরণ এবং সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ।
৩) লিঙ্গ ছিল তিন প্রকার- পুং, স্ত্রী এবং ক্লীব। লিঙ্গভেদে শব্দরূপ পৃথক হলেও ক্রিয়ারূপ পৃথক হত না।
৪) শব্দরূপের চেয়ে ক্রিয়ারূপের বৈচিত্র্য অনেক বেশি ছিল। কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্যে ক্রিয়ার রূপ হত পৃথক।
৫) ক্রিয়ারূপ ছিল দু’প্রকার পরস্মৈপদ ও আত্মনেপদ। ধাতু তিন ভাগে বিভক্ত ছিল- পরস্মৈপদী, আত্মনেপদী ও উভয়পদী।
৬) ক্রিয়ার কাল ছিল পাঁচ প্রকার লট্ (Present), লঙ্ (Imperfect), লুট (Future), লিট্ (Perfect) এবং (লুঙ্ (Arrist)। লঙ্, লুঙ্ ও লিট্ ছিল অতীতকালের প্রকারভেদ।
৭) ক্রিয়ার পাঁচটি ভাব ছিল- অভিপ্রায়, নির্বন্ধ, নির্দেশক, সম্ভাবক এবং অনুজ্ঞা।
৮) উপসর্গ ছিল কুড়িটি প্র, পরা, অপ, সম, অনু, অব, নির্, দুর্, অভি, বি, অধি, সু, উৎ, অতি, নি, প্রতি, পরি, অপি, উপ, আ।
৯) কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে নতুন শব্দ গঠনে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা ছিল অদ্বিতীয়। √বৃৎ + শানচ্ = বর্তমান।
১০) বৈদিক ধাতুর সঙ্গে ত্বা, ত্বায় ইত্যাদি প্রত্যয় যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া (Gerund) তৈরি করা হত। পাত্বা পীত্বা।
(গ) অন্বয়তাত্ত্বিক :
প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষায় কর্তৃ, কর্ম প্রভৃতি কারকের এবং ক্রিয়ার বিভিন্ন রূপের বিভক্তিচিহ্ন সুনির্দিষ্ট ছিল। ফলে বাক্যের মধ্যে ওই পদগুলি যেস্থানেই বসুক না কেন, তাকে সহজেই চিহ্নিত করা যেত। অর্থাৎ, বাক্যের অন্তর্গত পদগুলির অবস্থান পরিবর্তন করলেও বাক্যের অর্থ সেক্ষেত্রে বিপর্যস্ত হত না।