পাঠ্যক্রম বলতে কী বোঝো? পাঠ্যক্রম রচনার মূলনীতিগুলি আলোচনা করো।

উত্তর:- পাঠক্রম বলতে বোঝায়- শিক্ষার্থীদের সমস্ত রকমের অভিজ্ঞতা যা দ্বারা শ্রেণীকক্ষে, কর্মশালায়, খেলার মাঠে এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে লাভ করে। এই অর্থে বিদ্যালয়ের সমগ্র জীবনই পাঠক্রম যা শিক্ষার্থী জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রেই স্পর্শ করে এবং সুসংহত ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে।

পাঠক্রম নির্ধারণের মূলনীতি পাঠক্রম রচনার নীতিকে নিম্নলিখিত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা一

(১) বিষয় নির্বাচন-সংক্রান্ত নীতি : পাঠক্রমের গঠনের জন্য কোন্ কোন্ বিষয় নির্বাচন করা হবে, তা যে নীতিগুলির ওপর নির্ভর করে সেগুলি হল一

উদ্দেশ্যকেন্দ্রিকতার নীতি : প্রতিটি বিষয় শিক্ষার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য আছে। পাঠক্রমের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে নজর দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার লক্ষ্য এবং বিষয়ের উদ্দেশ্যগুলি বিশ্লেষণ করে পাঠক্রমের বিষয় নির্বাচন করা উচিত।

শিশুকেন্দ্রিকতার নীতি : শিশু অর্থাৎ যার জন্য পাঠক্রম নির্বাচন করা হবে তার চাহিদা, আগ্রহ, ক্ষমতা, প্রবণতা, পরিণমনের স্তর ইত্যাদির প্রতি লক্ষরাখা বিশেষ প্রয়োজন।

সামগ্রিক অভিজ্ঞতামূলক নীতি : সামগ্রিক অভিজ্ঞতা যা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির সাথে সাথে বিদ্যালয়ের বাইরে খেলার মাঠ, ভ্রমণ, সামাজিক কার্যাবলি প্রভৃতি থেকে পাওয়া যায়—সব নিয়েই পাঠক্রম প্রস্তুত করতে হবে।

বহুমুখীতা বৈচিত্র্যময়তার নীতি : পাঠক্রমের বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে বহুমুখীতা ও বৈচিত্র্যময়তার নীতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।


সামাজিক প্রয়োজনীয়তার নীতি : শিক্ষার মধ্য দিয়েই সমাজ তার চাহিদা, আশাপ্রত্যাশা পূরণ করে। তাই পাঠক্রমের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমাজের চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।

সৃজনশীলতার নীতি : পাঠক্রমের মধ্যে দিয়েই শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে। এজন্য পাঠক্রমের বিষয় নির্বাচনের সময় সৃজনধর্মী কাজের ওপর জোর দিতে হবে।

ঐতিহ্য সংরক্ষণের নীতি : সভ্যতার পরিবর্তন ও বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা যদি আমরা আমাদের পাঠক্রমে প্রয়ােজনমতাে সংশােধন ও পরিবর্তন করে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারি, তাহলে ওইসব মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও মূল্যবােধগুলি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।

অগ্রমুখীতার নীতি : পাঠক্রমের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে তা ব্যক্তি ও সমাজের অগ্রগতির সহায়ক হবে। পাঠক্রমের বিষয় নির্বাচনের সময় ভবিষ্যৎ অনুমান সঠিক হলে পাঠক্রম জীবনােপযােগী হয়ে উঠবে।

গণতান্ত্রিকতার নীতি : শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ গড়ে ওঠে সেজন্য পাঠক্রমে বিষয়বস্তু নির্বাচন এবং শিক্ষার কার্যসূচি অন্তর্ভুক্ত করার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

ব্যাবহারিকতার নীতি : পাঠক্রম রচনার সময় পাঠক্রমের বিষয়গুলি এমনভাবে নির্বাচন করা উচিত যাতে সেগুলি শিক্ষার্থীদের জীবনের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয় এবং শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এর প্রাসঙ্গিকতা থাকে।

সক্রিয়তার নীতি : আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম রচনা করার সময় সক্রিয়তার নীতিটির প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এর জন্য খেলাধুলা, সমাজসেবামূলক কাজ, উৎপাদনমূলক কাজ প্রভৃতিকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নৈতিকতার নীতি : শিক্ষার্থীর নৈতিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যসূচি পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়ােজন।

সাম্প্রতিকতম জ্ঞান অন্তর্ভুক্তির নীতি : পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয়ের সাম্প্রতিক জ্ঞান যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের নীতি : শিশুর আগ্রহ, ক্ষমতা, প্রবণতা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য দেখা যায়। তাই পাঠক্রম নির্ধরণের ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিগত পার্থক্যের নীতি প্রতিফলিত হওয়া প্রয়ােজন।

() পাঠক্রমের উপাদান বিন্যাসের নীতি : পাঠক্রমের উপাদানগুলির বিন্যাসের জন্য দুটি নীতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়一

সমন্বয়ের নীতি : পাঠক্রম রচনার সময় শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক প্রত্যাশার মধ্যে সমন্বয়সাধন করা দরকার। এই ধরনের পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনেক বেশি উপযােগী হবে।

ক্রমবিন্যাসের নীতি : পাঠক্রমে বিষয় ও অভিজ্ঞতা বিন্যাসের সময়ে ক্রমবিন্যাসের নীতিটি অনুসরণ করা বিশেষ প্রয়ােজন। শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের স্তর অনুযায়ী নির্দিষ্ট ক্রমে বিন্যস্ত করা উচিত।

() পাঠক্রমের ক্রিয়াগত নীতি : পাঠক্রম প্রণয়ন করার নীতির সঙ্গে এর প্রয়ােগ সম্পর্কিত নীতিগুলির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন৷ এগুলি হল一


কর্মকেন্দ্রিকতার নীতি : পাঠক্রম প্রয়ােগের ক্ষেত্রে শিশুর সক্রিয়তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, তবেই শিক্ষাকে জীবনকেন্দ্রিক করা সম্ভব হবে| পাঠক্রম প্রয়ােগের ক্ষেত্রে Learning by doing’-এই নীতির প্রতি গুরুত্ব আরােপ করতে হবে।


নমনীয়তার নীতি : পাঠক্রমকে নমনীয় করে তুলতে হবে। প্রয়ােজনমতাে পাঠক্রমে যাতে পরিবর্তন আনা যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ব্যবহার যোগ্যতার নীতি : পাঠক্রমটি যাতে সহজে ব্যবহার করা যায়, প্রয়ােজনীয় শিক্ষোপকরণ সংগ্রহ করা যায় এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, সেদিকে নজর দিতে হবে।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading