সর্বনাশা পদ্মা নদী, ‘কীর্তিনাশা’ বা রাক্ষসী পদ্মা কেউবা এ নদীকে ডাকে সম্ভাবনাময় নদী। এই নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পদ্মাপাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখ। এই নদীর জেলেদের জীবন নিয়ে অসাধারণ একটি দলিল ‘পদ্মা নদীর মাঝি’।
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের রচিত এই উপন্যাস পদ্মার জেলেদের জীবনচিত্র নিয়ে লেখা। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথভাবে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র।
সিনেমাটির পটভূমি বাংলাদেশের বিক্রমপুর-ফরিদপুর অঞ্চল। পদ্মার তীরবর্তী কেতুপুর ও পাশের গ্রামের পদ্মার মাঝি ও জেলেদের জীবনচিত্র সুনিপুণভাবে অঙ্কিত হয়েছে এই সিনেমায়। শহর থেকে দূরে এ নদীর তীরবর্তী জেলেপাড়ারর মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না-অভাব-অভিযোগ এই উপন্যাসে খোদিত হয়েছে বিশ্বস্ততার সঙ্গে।
‘পদ্মা নদীর মাঝি’ সিনেমাটি যেন পদ্মা পাড়ের জেলে জীবনের সুখ-দুঃখের নিখুত রূপায়ন। ১৯৯৩ সালে সিনেমাটি নির্মাণ করেন গৌতম ঘোষ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষদের নদীভিত্তিক জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দলিল বলে পরিচিতি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, চম্পা, রূপা ব্যানার্জি, উৎপল দত্তসহ নামকরা আরো বেশ কিছু শিল্পীমুখ।
বাংলাদেশ এর প্রধান নদী পদ্মা আর তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এলাকা। সেই এলাকার মানুষের জীবিকা মূলত নদী থেকে মাছ ধরতে যাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই তাদের দারিদ্র্যতা ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য তারা নিজেদের শারীরিক অসুস্থতাকেও তুচ্ছ করে মাছ ধরতে যায়। পদ্মায় ইলিশের মৌসুমে লাভের স্বপ্ন দেখলেও সেই স্বপ্ন কখনই পূর্ণ হয় না। আবার ভয়ঙ্কর পদ্মার প্রলয়ে তাদের জীবনে নেমে আসে প্রতিকূলতা।
তাছাড়া এই সিনেমায় রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রেম এবং স্বপ্ন। সিনেমার কোথাও নেই আভিজাত্যর ছোঁয়া। নিম্নবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন জীবন, তাদের মধ্যেকার ঈর্ষা, প্রতিহিংসা, তাদের বেঁচে থাকার, জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ের কথা রয়েছে।
মুক্তির বছরই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় সিনেমাটি। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও কয়েকটি শাখায় সিনেমাটি পুরস্কার অর্জন করে নেয়। সেরা ফিচার সিনেমা, সেরা পরিচালক বিভাগে ভারতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেয় সিনেমাটি।