নকশাল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত কয়েকটি বাংলা উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

নকশাল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত কয়েকটি বাংলা উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

নকশাল আন্দোলন, যা ১৯৬৭ সালে শুরু হয়েছিল, ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ছিল। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বাংলা সাহিত্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস রচিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি প্রধান উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হলো:

১. “মাঝরাতের মেষ” (১৯৭৪) – মহাশ্বেতা দেবী

পরিচয়: মহাশ্বেতা দেবীর “মাঝরাতের মেষ” উপন্যাসটি নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা এবং ওই আন্দোলনের প্রভাবকে তুলে ধরে। উপন্যাসটি মূলত সেই সময়ে গ্রামীণ অঞ্চলে নকশাল আন্দোলনের প্রভাবে সৃষ্ট অস্থিরতা এবং সংগ্রামের ছবি তুলে ধরে। এতে আন্দোলনের নেতাদের ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের সংগ্রাম, এবং আন্দোলনের কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

২. “হাজার চুরাশির মা” (১৯৯৩) – মহাশ্বেতা দেবী

পরিচয়: এই উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনের সময়ে সমাজে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন এবং তাত্ত্বিক রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলন দেখা যায়। বিশেষভাবে, আন্দোলনের ফলে পরিবারের বিভাজন এবং নারীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র একটি মা, যিনি তার সন্তানদের হারানোর ব্যথা এবং আন্দোলনের ফলস্বরূপ সমাজের বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হন।

৩. “অমল ধবল” (১৯৭৮) – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

পরিচয়: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের “অমল ধবল” উপন্যাসটি নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সমাজের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেয়। এটি একটি রাজনৈতিক থ্রিলার যা আন্দোলনের সময়কার সন্ত্রাস এবং রাজনৈতিক চক্রান্তের ওপর আলোকপাত করে। উপন্যাসটি ওই সময়ে একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনের বাস্তবতা তুলে ধরে।

৪. “যুদ্ধযাত্রী” (১৯৭৫) – সেলিনা হোসেন

পরিচয়: সেলিনা হোসেনের “যুদ্ধযাত্রী” উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবন, তাদের সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার চিত্রায়ণ করা হয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক এবং রাজনৈতিক নাটক যা আন্দোলনের নানা দিক তুলে ধরে।

৫. “তীর্থযাত্রী” (১৯৭৭) – সেলিনা হোসেন

পরিচয়: সেলিনা হোসেনের “তীর্থযাত্রী” উপন্যাসটি নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে রাজনৈতিক বিপ্লব এবং তার পরবর্তী প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। এতে আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় চরিত্র এবং তাঁদের আদর্শের অনুসরণকারী জনগণের জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে।

৬. “সাহেব বাজারের কাফেলা” (১৯৭৩) – রাহুল সঙ্কৃত্যায়ন

পরিচয়: রাহুল সঙ্কৃত্যায়নের “সাহেব বাজারের কাফেলা” উপন্যাসটি নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শহরের রাজনীতি এবং সমাজের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে। এই উপন্যাসটি আন্দোলনের সময়কার সমাজে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অস্থিরতার বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করে।

৭. “অগ্নিশিখা” (১৯৭৬) – ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়

পরিচয়: “অগ্নিশিখা” উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনের সময়ে এবং পরে সমাজের ভাঙন এবং মানুষের অস্থিরতা উঠে এসেছে। এটি একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ যা আন্দোলনের পরিণাম এবং তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।

উপসংহার:

এই উপন্যাসগুলিতে নকশাল আন্দোলনের প্রভাব এবং পরিণতি নানা দিক থেকে বিশ্লেষিত হয়েছে। এসব কাজ সত্ত্বেও, নকশাল আন্দোলনের সামগ্রিক প্রভাব এবং বাস্তবতা সাহিত্যের মাধ্যমে উপলব্ধি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব উপন্যাস আন্দোলনের যুগল চিত্র তুলে ধরে এবং সেই সময়ে সমাজের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে প্রকাশ করে।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading