ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করে এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করে এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় –

ধ্বনি পরিবর্তন হল ভাষার ধ্বনির রূপ, উচ্চারণ বা উচ্চারণের ধরণে পরিবর্তন। বিভিন্ন ভাষার বিবর্তন এবং সময়ের সাথে সাথে মানুষের ভাষা ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তনের ফলে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনের কারণগুলো হতে পারে শারীরিক, সামাজিক, ভাষাতাত্ত্বিক, বা মনস্তাত্ত্বিক। ধ্বনি পরিবর্তনের প্রধান কারণ এবং তার ধারাগুলি সংক্ষিপ্তভাবে নিচে আলোচনা করা হলো:

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ:

  1. শারীরিক কারণ:
    • মানুষের স্বরযন্ত্র, দাঁত, জিহ্বা ইত্যাদি শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরিবর্তন ধ্বনি পরিবর্তনের একটি কারণ হতে পারে।
  2. সামাজিক কারণ:
    • ভাষা ব্যবহারকারীদের সামাজিক অবস্থান, পেশা, বা আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ধ্বনি পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে।
  3. ভাষাতাত্ত্বিক কারণ:
    • ভাষার গঠন এবং নিয়মাবলী পরিবর্তিত হওয়ার কারণে ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। কিছু ধ্বনি উচ্চারণ করা সহজ, কিছু কঠিন—এমতাবস্থায় সহজ ধ্বনি ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দেয়।
  4. মনস্তাত্ত্বিক কারণ:
    • ভাষা শিক্ষার প্রক্রিয়া, শুনার অভ্যাস, এবং ব্যক্তির মানসিক অবস্থাও ধ্বনি পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করে।

ধ্বনি পরিবর্তনের প্রধান ধারা:

  1. অসংযমী বা অসঙ্গত ধ্বনি পরিবর্তন (Dissimilation):
    • একই ধরনের দুইটি ধ্বনি একসঙ্গে থাকলে, তাদের মধ্যে একটি বা উভয় ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে যাতে উচ্চারণ সহজ হয়।
    • উদাহরণ: “marble” → “mabble” (অসমঞ্জস উচ্চারণে পরিবর্তিত হওয়া)
  2. সহিত্য (Assimilation):
    • ধ্বনির মিলনের মাধ্যমে একে অপরের কাছাকাছি হয়ে যায় বা পুরোপুরি মিলিত হয়।
    • উদাহরণ: “input” → “imput” (উচ্চারণের সুবিধার্থে ধ্বনি মিলন)
  3. প্রত্যাবর্তন (Metathesis):
    • ধ্বনির স্থানে পরিবর্তন ঘটে, অর্থাৎ, একটি ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ একটি শব্দের মধ্যে স্থান পরিবর্তন করে।
    • উদাহরণ: “ask” → “aks” (স্থানের পরিবর্তন)
  4. স্বরবর্ণের পরিবর্তন (Vowel Shift):
    • স্বরবর্ণের উচ্চারণ স্থান পরিবর্তিত হয়, যেমন ইংরেজি ভাষার ‘গ্রেট ভাওয়েল শিফট’।
    • উদাহরণ: “name” (নাম) → “na” (নাম) (ইংরেজি ‘গ্রেট ভাওয়েল শিফট’-এর উদাহরণ)
  5. শব্দের পতন (Elision):
    • কোনো ধ্বনি বা অক্ষরের পতন ঘটে বা সম্পূর্ণরূপে বাদ পড়ে।
    • উদাহরণ: “family” → “famly” (মধ্যের একটি ধ্বনি বা অক্ষরের অপসারণ)
  6. উদ্বৃত্তি (Epenthesis):
    • কোনো শব্দের মধ্যে একটি নতুন ধ্বনি বা অক্ষর যোগ হয়।
    • উদাহরণ: “hamster” → “hampster” (মধ্যের একটি ধ্বনি বা অক্ষর যোগ হওয়া)

ধ্বনি পরিবর্তন ভাষার স্বাভাবিক বিকাশের অংশ এবং এটি ভাষার বিবর্তন ও বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

আরো পড়ুন-

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করো। এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

টীকা লেখো: সমীভবন, অপিনিহিতি।

উপসর্গযোগে তিনটি শব্দ গঠন করো।

সমাস কাকে বলে ? সমাস কয় প্রকার ও কী কী ? সমাসের যে-কোনো দুটি প্রকারভেদের বিস্তৃত আলোচনা করো।

প্রত্যয় কাকে বলে ? বাংলা প্রত্যয় বিষয়ে বিশদে আলোচনা করো।

বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে ? বিপর্যাস বা বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে

উদাহরণসহ সংজ্ঞা দাও- স্বরসংগতি, সংকর শব্দ, জোড়কলম, বর্ণ বিপর্যয়।

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করে এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।

বিভক্তি কাকে বলে ? শূন্য বিভক্তি বলতে কী বোঝ ? তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

Share
Scroll to Top

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading