নাট্যরচনার ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলালের প্রধান কৃতিত্ব ঐতিহাসিক নাটক রচনায়। বাংলা নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল উনিশ শতকের শেষের দিকে প্রবেশ করলেও ঐতিহাসিক নাটক রচনা করেন বিংশ শতকের সূচনা থেকে। তবে এ জাতীয়তাবাদের সুর উনিশ শতকে তাঁর রচিত কবিতাগুলিতেও মিলবে। বিংশ শতকের বঙ্গভঙ্গ প্রাক্কালে জাতির প্রয়োজনে তিনি ঐতিহাসিক নাটকে স্বদেশচেতনা ও মানবমৈত্রীর বন্ধন গড়ে তুললেন। দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে-‘তারাবাঈ’ (১৯০৩), ‘প্রতাপসিংহ’ (১৯০৫), ‘দুর্গাদাস’ (১৯০৬), ‘নূরজাহান’ (১৯০৮), ‘সাজাহান’ (১৯০৯) ও ‘চন্দ্রগুপ্ত’ (১৯১১)।
‘প্রতাপসিংহ’ নাটকে তিনি স্বদেশচেতনার সঞ্চার করেছেন। প্রতাপসিংহের বীরত্ব তুলে ধরে বাঙালির আত্মচেতনা জাগাতে চেয়েছেন। নিজ রাজ্যের জন্য প্রতাপের বীরত্ব, আত্মসংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য ফুটিয়ে তুলে তিনি এক স্বদেশচেতনা জাগিয়ে তোলেন। নাট্যসমালোচক অজিতকুমার ঘোষ-এর মতে-“প্রতাপসিংহ হইতেই মহাব্রতনিষ্ঠ স্বদেশী ভাবরঞ্জিত নাটকীয় যুগের সূচনা হয়।” ‘দুর্গাদাস’ নাটকেও স্বদেশচেতনার বীজ রয়েছে। দ্বিজেন্দ্রলালের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক নাটক ‘নূরজাহান’ ও ‘সাজাহান’। নূরজাহান চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দু ফুটিয়ে তুলতে তিনি এ নাটক রচনা করেন। নাটকটি ট্র্যাজেডিমূলক নাটক। ‘মেবার পতন’ ঐতিহাসিক নাটক হলেও দ্বিজেন্দ্রলাল এখানে সাম্যবাদের প্রচারক হয়ে
উঠেছেন। বিশ্বপ্রেমের আদর্শ সঞ্চার করেছিলেন-“কিসের শোক করিস ভাই-রাখে আবার তোরা মানুষ হ/গিয়েছে দেশ দুঃখ নাই…আবার তোরা মানুষ হ।”
ব্যক্তি শাহজাহানের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘সাজাহান’ নাটকটি। দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে ‘সাজাহান’ শ্রেষ্ঠ স্থানলাভ করেছে। এ নাটকও ট্র্যাজেডি-মূলক নাটক। সাজাহান, সোলেমান, সুজা, মুরাদ চরিত্রগুলি ট্র্যাজেডির সুর বহন করে এনেছে। আসলে ঐতিহাসিক নাটক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্র্যাজেডিমূলক হয়ে ওঠে। বিংশ শতকের সূচনালগ্নে বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলি একটি সুর বহন করে এনেছিল। সে-সুর স্বদেশচেতনার সুর। দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটক সম্পর্কে সমালোচক অজিতকুমার ঘোষের মন্তব্য স্মরণীয়-“ঐতিহাসিক নাটকের অনুকূল পরিবেশ সৃজন করিতে বিজেন্দ্রলালের ন্যায় আর কেহই সক্ষম হন নাই। তাঁহার নাটক আমাদের চোখের সম্মুখে ইতিহাসের পাতা হইতে এক বিরাট জগৎকে জীবন্ত করিয়া উপস্থাপিত করে।”