দুঃখবাদী কবি হিসেবে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত পরিচিত। তাঁর কাব্যে প্রবলভাবে দুঃখবাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে। সমাজ, সময়কে তিনি দেখেছেন দুঃখের পিন্ড হিসেবে। তাঁর ‘মরীচিকা’, ‘মরুমায়া’, ‘মরুশিখা’ কাব্যে প্রবল দুঃখের সুর ফুটে উঠেছে। সুশান্ত বসু ‘যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কাব্যসংগ্রহ’-এর ভূমিকায় লিখেছেন-“যতীন্দ্রনাথ শোনালেন তাঁর রোমান্টিকতাবিরোধী দুঃখবাদী জীবনদর্শনের এক নতুন সুর। যে দুঃখবাদ কিন্তু কোনো নেতিবাদী নৈরাশ্যপীড়িত জীবনানুভব নয়, মানুষের প্রতি সুতীব্র ভালোবাসায় উজাগর এক বিশিষ্ট জীবনদৃষ্টি।” তবে দুঃখই শেষ কথা নয়। দুঃখের মধ্যে দিয়েও তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন। তাই ‘দুখবাদী’ কবিতায় শুনতে পাই-“তেলে সিন্দুরে এ সৌন্দর্যে ভবি ভুলিবার নয়/সুখ-দুন্দুভি ছাপায়ে বন্ধু উঠে দুঃখেরি জয়।” এই দুঃখের মধ্যেও তিনি মানুষের কথা বলেন। মানুষের জয়গানের বাণী সঞ্চার করেন। কেননা তিনি জানেন মানুষই শ্রেষ্ঠ। নিজে এই কবিতাতে সে সত্য ঘোষণাও করেছেন। দুঃখের মধ্যে যে আনন্দ, সেই তো জীবনের পরম পাওয়া। সে সত্যের সন্ধান কবি জানতেন। তেমনি জীবনে দুঃখই শেষ ও চরম সত্য, সে সম্পর্কেও অবগত। তাই এই কবিতার অন্তিমে ধ্বনিত হয়েছে-“সৃষ্টির সুখে মহাখুশি যারা, তারা নর নহে জড়/যারা চিরদিন কেঁদে কাটাইল তারাই শ্রেষ্ঠতর/মিথ্যা প্রকৃতি, মিছে আনন্দ, মিথ্যা রঙিন সুখ/সত্য সত্য সহস্রগুণ সত্য জীবনের দুখ।” আবার তিনিই লিখেছেন ‘দরিদ্রনারায়ণ’ কবিতা। দরিদ্র নরের মধ্যেই নারায়ণের বসবাস বলে তিনি মনে করতেন।