উনিশ শতকের বাংলা নাটকে একজন উল্লেখযোগ্য নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। রঙ্গমঞ্চের প্রয়োজনে তাঁকে বহু নাটক লিখতে হয়েছে। শুধু নাটক লেখা নয়, রঙ্গমঞ্চের প্রয়োজনে উপন্যাসকেও নাট্যে রূপান্তরিত করতে হয়েছে। উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদী চেতনা উন্মেষের বিশেষ প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। সেই নিমিত্তেই লেখা হয়েছিল ঐতিহাসিক নাটক। গিরিশচন্দ্রের ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে ‘চণ্ড’ (১৮৯০), ‘সিরাজদৌল্লা’ (১৮৬০), ‘মীরকাশিম’ (১৯০৬), ‘ছত্রপতি শিবাজী’ (১৯০৭) ও ‘অশোক’ (১৯১০)।
গিরিশচন্দ্রের প্রথম ঐতিহাসিক নাটক ‘চণ্ড’। এ নাটকের কাহিনি নাট্যকার টডের রাজস্থানের ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করেছেন। গিরিশচন্দ্রের অন্যতম ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজদৌল্লা’। বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজকে সামনে রেখে তিনি পরাধীনতার যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। এ নাটক সেকালে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। নাট্যকার নিজেই জানিয়েছেন-“আমার ‘সিরাজদৌল্লা’ যে জনপ্রিয় হইয়াছে শুনিতে পাই, তাহা আমার সৌভাগ্য।” হিন্দু-মুসলমানের মিলন চেতনার ডাক দিয়েছিলেন নাট্যকার, যা উনিশ শতকের প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল-“ওহে হিন্দু-মুসলমান/এসো করি পরস্পর মার্জনা এখন/হই বিস্মরণ পূর্ব বিবরণ/করো সবে মম প্রতি বিদ্বেষ বর্জন।”
গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘মীরকাশিম’ নাটকটিও রচিত হয়েছে জাতীয়তাবাদী ভাবনা থেকে। বিংশ শতকের সূচনায় ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গ নীতি, হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির যে চক্রান্ত সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তারই প্রতিবাদস্বরূপ গিরিশচন্দ্রে এ নাটক লেখেন। ইতিহাসের জগতে গিয়ে বাঙালির পারস্পরিক মেলবন্ধনের সূত্র কত গভীর তা দেখিয়ে দেন। এরপর গিরিশচন্দ্র লিখলেন ‘অশোক’ নাটক। অশোকের দুই রূপ- চণ্ডাশোক ও ধর্মাশোক। অশোক রণনীতি ত্যাগ করে ধর্মনীতি গ্রহণ করেছিলেন। সেই অশোককে সামনে রেখে নাট্যকার মানবতার মেলবন্ধন গড়ে তোলেন। উনিশ শতকে গিরিশচন্দ্রের ঐতিহাসিক নাটকগুলি বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। পরাধীন ভারতবর্ষে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এ নাটকগুলি যে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।