ডেলরস কমিশন বর্ণিত যে-কোনো দুটি শিক্ষার স্তম্ভ আলোচনা করো।

জানার জন্য শিক্ষা :

Know কথাটির অর্থ হল ‘জানা’। আমরা বলি জ্ঞান। বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মুহূর্তে আমাদের জানার প্রয়োজন। জানার ফলে আমাদের মধ্যে একটা চিন্তা করার ক্ষমতা, বিচার করার ক্ষমতা, জীবনযাপন করার চেতনা বা উপলব্ধি গড়ে ওঠে। জ্ঞানসমৃদ্ধ হলেই মানুষ তার করনীয় কি তা সে বুঝতে পারে। কর্মদক্ষতার জন্য জ্ঞান প্রয়োজন, আবার জ্ঞানে বলীয়ান না হলে বা জ্ঞান সমৃদ্ধ না হলে মানুষের মনুষ্যত্ব বোঝা যায় না। অর্থাৎ মানুষের কর্মজগত, অনুভূতির জগত জ্ঞান সমৃদ্ধতার উপর নির্ভরশীল। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ গীতায়, এই কথাটি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, কর্ম কীভাবে করা হবে সেটা নির্ভর করে সেই বিষয়ে ব্যাক্তির জ্ঞানের উপর। জ্ঞান ছাড়া সংগতিবিধান হয় না। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক সমস্ত ক্ষেত্রে সঙ্গতিবিধানের জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন।  

জ্ঞান মানুষকে সত্য উপলব্ধি করতে, বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন ও সমাধান করতে সাহায্য করে। এটা আসে অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন ও পুনঃসৃজনের মাধ্যমে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, আমাদের ভেতরেই পূর্ণতা বা জ্ঞানের ভাণ্ডার রয়েছে, সেটিকে বিকাশ করতে হয়। একই ভাবে রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি জ্ঞানের জয়গান গেয়েছেন। জ্ঞান থেকে আসে মুক্তি, যার মধ্যে আছে জীবনের সম্পূর্ণ সার্থকতা। এই জ্ঞানের জন্য চাই শিক্ষা। জ্ঞান ছাড়া ব্যাক্তির বিকাশ ঘটে না, অভিযোজন ঘটে না, জ্ঞানেই মুক্তি, জ্ঞানেই জীবনের সার্থকতা।

কর্মের জন্য শিক্ষা:

বর্তমান যুগের মানুষের জীবনযাত্রার দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, মানুষ যন্ত্রের মত প্রতিমুহূর্তে কোন না কোন কাজ করে চলেছে। এই কাজ করা কে আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে worship। গোটা শিক্ষা প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হল মানুষকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে সে কাজের মানুষ হয়ে উঠতে পারে, যাতে তার মধ্যে কর্মদক্ষতার বিকাশ ঘটে। বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নতির ফলে কাজের প্রকৃতি, পরিমাণ, ধরণ- সবকিছু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মানুষকে উৎপাদনশীল হতে হয়, তা না হলে জগতে তার আর কোন দাম নেই। কর্মের দিকে লক্ষ্য রেখে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। বিবেকানন্দ, গান্ধীজি, রবীন্দ্রনাথ, রুশো প্রমুখ প্রত্যেকে শিক্ষায় ‘কাজ’-কে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। কোঠারি কমিশনও তার রিপোর্টে কর্মশিক্ষাকে গ্রহণ করার কথা বলেছেন। ১৯৮৬ জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিক্ষায় ‘কাজ’-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন-

  1. ব্যাক্তি বা শিক্ষার্থীর সাথে কর্মজগতের পরিচিতি ঘটে।
  2. সামাজিক সমস্যাবলীর সাথে পরিচিতি ঘটানো যায়।
  3. সেই সমস্যাগুলোর সমধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়।
  4. গতিশীলতা ও দলগত মনোভাব সৃষ্টি হয়।
  5. মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার হয়।
  6. সৃজনশীলতা, স্বাধীনতার বিকাশ ঘটে
  7. ব্যাক্তি অনন্দ পায় ও আজানা কে জানার অগ্রহ বাড়ে। 
Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading