ঠান্ডা যুদ্ধের সারাংশ
ঠান্ডা যুদ্ধ (Cold War) ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে 1991 সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত সময়কালের একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও আদর্শিক সংঘাত। এই যুদ্ধের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। এটি সরাসরি সামরিক সংঘাতের পরিবর্তে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, এবং আদর্শিক প্রতিযোগিতা ছিল, যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়।
ঠান্ডা যুদ্ধের কারণ ?
ঠান্ডা যুদ্ধের প্রধান কারণগুলো হল:
- আদর্শিক পার্থক্য: যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদ এবং গণতন্ত্র বনাম সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজম।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল: যুদ্ধের পরে ইউরোপে শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্ব ইউরোপে প্রভাব বিস্তার।
- পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা: উভয় পক্ষই পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বৃদ্ধির চেষ্টা করে।
- মার্শাল প্ল্যান: যুদ্ধপরবর্তী ইউরোপ পুনর্গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন যা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে হুমকি হিসেবে দেখা হয়।
- ন্যাটো এবং ওয়ারশ চুক্তি: পশ্চিমা এবং পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক জোটের গঠন যা ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।
ঠান্ডা যুদ্ধের ইতিহাস:
প্রধান ঘটনা ও সময়রেখা:
- ১৯৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা।
- ১৯৪৭: ট্রুমান ডকট্রিন এবং মার্শাল প্ল্যান ঘোষণা।
- ১৯৪৯: ন্যাটো গঠিত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করে।
- ১৯৫০–১৯৫৩: কোরিয়ান যুদ্ধ।
- ১৯৫৭: সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে।
- ১৯৬২: কিউবান মিসাইল সংকট।
- ১৯৬৫–১৯৭৩: ভিয়েতনাম যুদ্ধ।
- ১৯৮০–এর দশক: মিখাইল গর্বাচেভের গ্লাসনস্ত (উন্মুক্ততা) এবং পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) নীতির প্রবর্তন।
- ১৯৮৯: বার্লিন প্রাচীর পতন।
- ১৯৯১: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি।
ঠান্ডা যুদ্ধের তথ্য:
- মার্শাল প্ল্যান: ১৯৪৮ সালে চালু হয়, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের পুনর্গঠনের জন্য প্রায় $১৩ বিলিয়ন প্রদান করে।
- ন্যাটো (NATO): ১৯৪৯ সালে গঠিত একটি সামরিক জোট যার উদ্দেশ্য পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
- ওয়ারশ চুক্তি: ১৯৫৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে গঠিত সামরিক জোট।
- কিউবান মিসাইল সংকট: ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে সংঘটিত একটি বড় আন্তর্জাতিক সংকট, যা পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি নিয়ে আসে।
- স্পুটনিক উৎক্ষেপণ: ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে, যা মহাকাশ প্রতিযোগিতার সূচনা করে।
- গ্লাসনস্ত এবং পেরেস্ত্রোইকা: মিখাইল গর্বাচেভের প্রবর্তিত সংস্কার নীতি, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়।
ঠান্ডা যুদ্ধের প্রভাব:
- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিবর্তন: বিশ্ব দুইটি প্রধান শক্তির মধ্যে বিভক্ত হয়, যার ফলে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন জোটে যোগ দেয়।
- সামরিক প্রতিযোগিতা: বিশাল সামরিক বাজেট এবং গবেষণা ও উন্নয়নের খরচ বৃদ্ধি পায়।
- প্রক্সি যুদ্ধ: বিভিন্ন দেশে সরাসরি সংঘাত এড়ানোর জন্য প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালিত হয়।
- অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা: মহাকাশ প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।
- সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব: উভয় পক্ষই প্রোপাগান্ডা এবং আদর্শিক প্রচার প্রচেষ্টা পরিচালনা করে।