জীবনানন্দ দাশের কাব্যে ইতিহাস চেতনার পরিচয় দাও।

জীবনানন্দ যেমন প্রকৃতির কবি, তেমনি তিনি ইতিহাস-সচেতন কবি। ইতিহাস-চেতনা ও সময়-চেতনা তাঁর কাব্যে পাশাপাশি সহাবস্থান করে আছে। তিনি নিজেই জানিয়েছেন মহাবিশ্বলোকের ইশারার থেকে উৎসারিত সময়-চেতনা আমার কাব্যে একটি সলাতিসাধক অপরিহার্য সত্যের মতো; কবিতা লিখবার পথে কিছুদূরে অগ্রসর হয়েই এ আমি বুঝেছি, গ্রহণ করেছি।” মিশর, বিদিশা, উজ্জয়িনী, গ্রিস, অশোকের কাল থেকে তিনি কনফুশিয়াসের জগতে প্রবেশ করেছেন। কখনও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের চিত্র উঠে এসেছে। সিংহল সমুদ্র থেকে নাটোর পর্যন্ত তাঁর কাব্যের ভূগোল বিস্তৃত। জীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘বনলতা সেন’ কবিতাতেও ইতিহাস চেতনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেখানে কবি ইতিহাসের এক রঙিন জগতে পৌঁছে যান-“সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে/অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে/সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;” ইতিহাসের জগৎ থেকেই তিনি প্রেমের জগতে প্রবেশ করেছেন। ‘নগ্ন নির্জন হাত’ কবিতায় ইতিহাসবোধ স্পষ্ট হয়েছে। কবি আমাদের শুনিয়েছেন-“ভারতসমুদ্রের তীরে/কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে/অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে/আজ নেই, কোনো এক নগরী ছিল একদিন।” কোনো এক অচেনা নারীর সন্ধানে তিনি কাশ্মীর থেকে বেরিন তরলো চলে যান। জীবনানন্দের অন্যতম প্রেমের কবিতা ‘সুরঞ্জনা’-তেও রয়েছে ইতিহাসের অনুষঙ্গ-“গ্রীক হিন্দু ফিনিশিয় নিয়মের বৃঢ় আয়োজন/শুনেছ ফেনিল শব্দে তিলোত্তমা নগরীর গায়ে।” তেমনি সমসাময়িক ইতিহাসের প্রসঙ্গা, সময়ের প্রসঙ্গকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। দাঙ্গা, দেশভাগ, ফ্যাসিবাদের চিত্র তাঁর কবিতায় স্পষ্ট হয়েছে।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading