‘জলসাঘর’ গল্পে গল্পকার জমিদারী ব্যবস্থার যে ছবি তুলে ধরেছেন তার পরিচয়
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জলসাঘর’ গল্পে জমিদারীব্যবস্থার একটি গভীর ও সমালোচনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে জমিদারীব্যবস্থার যে ছবি দেখা যায় তা নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে:
জমিদারীব্যবস্থার চিত্র:
অভিজাত শ্রেণির বিলাসিতা ও অবক্ষয়:
গল্পে জমিদারের জীবনযাপন এবং তাঁর বিলাসী জীবনযাত্রার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। জমিদাররা তাদের বিলাসবহুল জীবন কাটান, কিন্তু এর বিপরীতে তাদের সমাজে আর্থিক সংকট, শোষণ, এবং সামাজিক অবক্ষয় চলছে। গল্পে জমিদারীর এই প্রভাব ও অবক্ষয় উন্মোচিত হয়েছে।
দারিদ্র্য ও শোষণ:
জমিদারীর শোষণমূলক ভূমিকা ও প্রজা-পীড়নকে গল্পে কেন্দ্র করে তুলে ধরা হয়েছে। জমিদারীর শোষণ ও নির্যাতনের ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য ও দুর্ভোগ দৃশ্যমান। জমিদাররা প্রজাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে তাদের মেধা ও সম্পদ শোষণ করে।
মহিম চরিত্রের মাধ্যমে মানবিক দিক:
মহিম চরিত্রের মাধ্যমে জমিদারীর অবক্ষয়ের মানবিক দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। মহিম, জমিদারের একজন পুরনো সেবক, জমিদারীর পতনের সময় তার কর্তব্য ও বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়। মহিমের জীবনযাত্রার মাধ্যমে জমিদারীর ধ্বংসাত্মক প্রভাব এবং তার সঙ্গে যুক্ত সামাজিক অবস্থা চিত্রিত হয়েছে।
মৌলিক সামাজিক সমস্যার প্রতিফলন:
জমিদারীব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের মৌলিক সমস্যাগুলো যেমন অসাম্য, বৈষম্য, এবং নৈতিকতার অভাব তুলে ধরা হয়েছে। জমিদারীর শ্রেণী বৈষম্য ও দুর্নীতির প্রতিফলন গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জমিদারীর অবসান ও নতুন সমাজের সৃষ্টি:
গল্পের শেষে জমিদারীর পতনের চিত্র দেখা যায়, যা একটি পুরনো ব্যবস্থার অবসান এবং নতুন সমাজের সূচনার ইঙ্গিত দেয়। জমিদারীর ধ্বংস এবং এর পরবর্তী পরিবর্তন সমাজের নতুন দিশা নির্ধারণ করে।
সংক্ষেপে, ‘জলসাঘর’ গল্পে জমিদারীব্যবস্থার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা অভিজাত শ্রেণির বিলাসিতা, শোষণ, দারিদ্র্য, এবং সমাজের মৌলিক সমস্যাগুলোর প্রতিফলন। এই চিত্রের মাধ্যমে জমিদারীর পতন ও সমাজের নতুন দিশার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।