ছোটগল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয় দাও।

ছোটগল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয়:

  ছোটগল্পের কোনো দেশী বিদেশী সংজ্ঞায় তাঁর আস্থা নেই, কুড়িটি গল্পসংগ্রহে সংকলিত ২২২টি গল্প এবং এ যাবৎ অগ্রন্থিত প্রায় ৫০টি গল্পের মধ্যেক নেই কোনো কালানুক্রমিক বিবর্তনের ইতিহাস। তিনি এক‌ইকালে লিখতে পারেন ‘অতসীমামী’র মতো শরৎচন্দ্র প্রভাবিত আটপৌরে গল্প এবং ‘আত্মহত্যা র অধিকারের মতো ভিত কাঁপানো গল্প।

মানিক বন্দ্যোভপাধ্যাপয়ের উপন্যা্সগুলি নানা কাহিনি সমবায়ে গ্রথিত, যেমন ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যা্স থেকে পাই কুমুদ-মতির আখ্যাকন, বিন্দুর গল্প, যাদ পন্ডিতের আখ্যােন ইত্যাাদি একাধিক কাহিনি। শেষ পর্যায়ের উপন্যা সে এই প্রবণতা আরো স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে মানিক বন্্যো  পাধ্যানয় নিজেই বলেছেন –

“প্রত্যেযক উপন্যাযসেই একাধিক গল্পের উপাদান এবং সংকেত কম বেশি থাকে।”

শুধু তাই নয়, এর বিপরীত পদ্ধতিও লক্ষ্য্ করা গেছে। অর্থাৎ কোনো একটি গল্প লেখার পর তার মধ্যেে উপন্যাপসের সম্ভাবনা পেয়ে বনস্পতির আকার নিয়েছে। আবার অসংখ্যপ এমন গল্প আছে যা কোনো অর্থেই গল্প নয়। সেগুলো তাত্ত্বিক প্রবন্ধমূলক নতুবা আত্মজৈবনিক টুকরো কাহিনি। কিংবা সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের দলিলের ছেঁড়াপাতা।

এতক্ষণ আলোচনা করলাম মূলত মানিক বন্দ্যোমপাধ্যাওয়ের ছোটগল্পের আঙ্গিক বিষয়ে। এবার আসি বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে –

মানিক বন্দ্যো়পাধ্যা্য়ের মনোভূমিতে আমৃত্যুয বিচরণ করেছেন দু’জন – ফ্রয়েড ও মার্কস। কখনো এককভাবে কখনো বা সম্মিলিতভাবে দুজনে। তাই মানিকের জীবনদৃষ্টি ও অন্তর্লোকের বিবর্তনের সঙ্গে ছোটগল্পের ধারণাটিকে সমান্তরালভাবে রেখে দুটি মাত্রা নির্ণয় করা যায় –

১. মধ্যববিত্ত নরনারীর জটিল মনস্তত্ত্ব – ব্যটক্তিকেন্দ্রিক ধারা

২. আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নরনারীর জীবন সংগ্রাম – সমাজকেন্দ্রিক ধারা

মধ্য.বিত্ত নরনারীর জটিল মনস্তত্ত্ব

যুদ্ধোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে র প্রধান উপজীব্যগ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় অর্থনৈতিক ভাঙনের প্রেক্ষাপটে চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক পর্যালোচনা। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত ও জগদীশ গুপ্তের গল্পে এবং কল্লোল গোষ্ঠীর লেখকদের কথাসাহিত্যে  এই ভাঙনের ছবি বিচিত্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এরপর মানিক বন্দ্যোেপাধ্যাোয় সেই বিচিত্র ছবিতে যোগ করলেন জটিল ও কৌণিক মাত্রা এবং তা মূলত নির্মোহ মানিক বন্দ্যো পাধ্যা য়ের বিজ্ঞান মনস্কতাকে কেন্দ্র করে প্রতিভাত হয়েছে।

আধুনিক সভ্য তার আড়ালে মধ্যরবিত্ত চরিত্রের যে বিকৃতি ঘটেছে তাকেই বিশ্লেষণ করেছেন ‘সরীসৃপ’ গল্পে। চারু-বনমালী-পরী – এই তিনটি মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা বা স্বার্থপরতার স্বরূপ উন্মোচনের কাহিনি মানিক

বন্দ্যোপপাধ্যাূয়ের এই ‘সরীসৃপ’ গল্প। চারুর বিকৃত মস্তিস্ক স্বামী ও মনোরোগী পুত্র ভুবনের মাঝখানে তার সৌন্দর্য ও যৌবন নিতান্ত‌ই মূল্যাহীন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বনমালী সে বুভুক্ষু যৌবনের পাহারাদারমাত্র।

“চারুর মাথার চুলের কালিমা ফ্যাতকাসে হ‌ইয়া আসিয়াছে কেবল এইটুকু লক্ষ্যব করিয়া আবার সে আহারে মন দিল” – লেখকের এই বর্ণনা স্পষ্ট করে চারুর প্রৌঢ়ত্ব এবং বনমালী ও চারুর সম্পর্কের দূরত্ব।

 ‘সরীসৃপ’ গল্পে প্রকাশিত এই জৈবকামনা কেবল মধ্যকবিত্ত জীবনে প্রতিফলিত হয়নি, ‘সভ্যসতার পালিশ করা জীবন ও জগতের বাইরে একেবারে নিচুতলার মানুষের জীবনেও প্রবাহিত। তবে সেখানে মধ্যদবিত্তের ভন্ডামি নেই, সেখানে সকল জৈব বৃত্তিই বলিষ্ঠ ঋজুতায় দৃশ্য মান, প্রত্যভক্ষ।

আর সেই সঙ্গে ব্য‍ক্ত হয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য  মরীয়া মানুষের প্রবলতম জীবন পিপাসা – “মরিবে না সে কিছুতেই মরিবে না। বনের পশু যে অবস্থায় বাঁচে না, সেই অবস্থায় মানুষ যে বাঁচবেই।”

অধ্যাাপক গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর মতে,

“লেখকের (মানিক বন্দ্যোৌপাধ্যা য়) অসংশায়িত শিল্প সাফল্য  এখানে যে তিনি ভিক্ষুক সমস্যাখর মতো একটি পরিচিত সামাজিক সমস্যাযর সঙ্গে সমাজ বহির্ভূত আদিম জৈবকামনার ‘প্রাগৈতিহাসিক’ এক প্রবণতাকে এক‌ই কাহিনী ও চরিত্র সূত্রে গ্রথিত করতে পেরেছেন।”

ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্রের পরিচয় দাও।

গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কাব্যপ্রতিভার পরিচয় দাও।

মধুসূদন দত্তের রচিত দুটি প্রহসনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সামাজিক উপন্যাস রচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

সামাজিক উপন্যাস রচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading