গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কাব্যপ্রতিভার পরিচয় দাও।

Table of Contents

গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কাব্যপ্রতিভার পরিচয়:

বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার মজিলপুরের  উচ্চশিক্ষিত পিতা হারানচন্দ্র মিত্রের মেয়ে গিরীন্দ্রমোহিণী কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন । তিনিই পিতার কাছে কাব্যচর্চার প্রেরণা পেয়েছিলেন।  মাত্র ১০ বছর বয়েসে কলকাতায় বিয়ে হয় । স্বামী নরেশচন্দ্র দত্তের কাছ থেকেও তিনি সহযোগিতা পেতেন । ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে নরেশচন্দ্রের মৃত্যুর পর গিরীন্দ্রমোহিনীর অশ্রুকণা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এই বইটিতেই “ফুটফুটে জোছনায় ধবধবে আঙিনায় একখানি মাদুর পাতিয়া” এই জনপ্রিয় কবিতাটি আছে।

গিরীন্দ্রমোহিনীর প্রথম কবিতার বই ছিল কবিতাহার (১৮৭৩) । কবিতার বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারতকুসুম (১৮৮২) অশ্রুকণা (১৮৮৭), আভাষ (১৮৯০), শিখা (১৮৯৬), অর্ঘ্য (১৯০২) । অন্যান্য বইয়ের মধ্যে জনৈক হিন্দু মহিলার পত্রাবলী (১৮৭২), নাটকের মধ্যে সন্ন্যাসিনী বা মীরাবাঈ (১৮৯২), সিন্ধুগাথা (১৯০৭) এবং কৌতুক রচনার মধ্যে বুড়োর অ্যালবাম উল্লেখযোগ্য ।

গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর পত্রিকা সম্পাদনাঃ

জাহ্নবী নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন।

রচনাবলিঃ

কবিতাহার (১৮৭৩)

•কবিতাহার—এ গ্রন্থখানির প্রকাশকাল ১৮৭৩ সাল।গিরীন্দ্রমােহিনী দাসীর রচনা পরবর্তীকালে বসুমতী সাহিত্যমন্দির গ্রন্থাবলী আকারে প্রকাশ করে। উক্ত গ্রন্থে কবির নয়টি কাব্যগ্রন্থ এবং প্রবন্ধাদি প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত গ্রন্থের ৪৩৭ পৃষ্ঠা থেকে ৪৬৯ পৃষ্ঠা—স্থানের মধ্যে‘কবিতাহার’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে। কবিতাহার’-এ কবির পাঁচটি মাত্র সন্দর্ভ নিবেশিত আছে, যথাক্রমে—‘উষা-বর্ণন’, ‘বঙ্গ মহিলাগণেরহীনাবস্থা’, ‘শরৎ-বর্ণন’, ‘সঙ্গিনীর বৈধব্যে’, ‘লর্ডমেয়াের অপমৃত্যু’। কবিতাহার’সম্ভবত কবির প্রথম রচনা।

•             ‘ঊষা – বর্ণন’ – ৪৩ টি স্তবকে ঊষার বর্ণনা করেছন।

•             ভারতকুসুম (১৮৮২)

গিরীন্দ্রমােহিনী দাসীর পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ভারতকুসুম, প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে । গিরীন্দ্রমোহিনী গ্রন্থাবলীর ৪৭১ থেকে ৫৫৮ পৃষ্ঠা স্থানের মধ্যে রচয়িত্রীর ভারতকুসুমের কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে। এটি তার সাহিত্য জীবনের প্রথম দিককার রচনা। গ্রন্থকত্রী তার ‘ভারতকুসুম’-এর ভূমিকাতেই এ-বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।

যে কবিতাগুলি এ-গ্রন্থে স্থান পেয়েছে, তা হলো, যথাক্রমে ‘বসন্তপঞ্চমী’‘সে কোথায়’, ‘প্রাবৃঢ় কমল’, ‘মনের প্রতি’, ‘ঈশ্বরের প্রতি’, ‘পতি-ভক্তি,

‘বঙ্গ-বিনােদিনী’, ‘সতীত্বের খনি’, ‘নিশীথিনী’, ‘কোজাগর-পূর্ণিমা’, ‘জাগ্রতে স্বপ্ন, ‘দাম্পত্য প্রণয়’, ‘মধ্যাহ্নে চিন্তাতুরা’, ‘বাল্যকাল ও বালিকা’, ‘সুখের সীমা’, ‘সাগর পারে’, ‘নিশীথে-বংশীধ্বনী’, ‘শারদীয় উৎসব’, ‘একি ভালবাসা’, ‘কর্ণের প্রতি ভীষ্মের উত্তেজনা বাক্য’, ‘নদীর প্রতি’, ‘দীনবন্ধু অস্তাচলে’, ‘তপােবন, ‘আশা অসীমা’, ‘করবী-বন্ধন’, ‘মধুকরােত্তেজিতা শকুন্তলা’, ‘যৌবন’, ‘ময়ূরী’,

‘সখীর প্রতি’, ‘হৃদয়।

অশ্রুকণা (১৮৮৭)

গিরীন্দ্রমােহিনী দেবীর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘অশ্রুকণা’ উৎকর্ষতা এবং জনপ্রিয়তা দু-দিক থেকেই শ্রেষ্ঠ। গ্রন্থখানির প্রকাশকাল ১৮৮৭ সাল। ‘অশ্রুকণা’ নামকরণের মধ্যে কাব্যবস্তুর কিছুটা পরিচয় আছে। ভূমিকায় কবি বলেছেন—“অধিকাংশ কবিতা শােক সম্বন্ধীয় বলিয়া পুস্তকের নাম ‘অশ্রুকণা রহিল। গিরীন্দ্রমােহিনী গ্রন্থাবলীর ১৭১ থেকে ২৬৬ পৃষ্ঠায় ‘অশ্রুকণা’র কবিতা গুলি স্থান পেয়েছে।

• গ্রন্থকত্রীর হৃদয়ের অপরিসীম বেদনা এবং শােকের মধ্যে ‘অশ্রুকণা’র কবিতাগুলি রচিত।

•   ‘অশ্রুকণা’ মােট নিরানব্বইটি কবিতা সম্বল ত গ্রন্থ। গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা শােক সম্বন্ধীয় হলেও, অন্য কবিতাও আছে। মােটামুটিভাবে কবিতা- গুলির শ্রেণীবিন্যাস করলে দাড়ায়,—শােক সম্বন্ধীয়, অপত্য স্নেহ, ভগবৎপ্রেম, নিসর্গপ্রীতি এবং দাম্পত্য প্রণয়। শােক সম্বন্ধীয় কবিতার মধ্যে একটি বিধবার প্রতি’, ‘হায় কেন ? একি হৃদয়পাথী’, ‘কতদিন’, ‘মরীচিকা’, ‘কোথায়’, ‘আকুল ব্যাকুল হৃদি’, ‘হাই’, ‘অশ্রু’, ‘বিষাদ’, ‘শ্মশান’, ‘বিধবা’, ‘তুমি’ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। প্রকৃতিপ্রেমের অর্থাৎ নিসর্গ প্রীতির কবিতাগুলির মধ্যে ‘পূর্ণিমাগীতি’, ‘মাধবী’, ‘গােলাপ’, ‘পাথী’, ‘গ্রাম্যছবি’, ‘যমুনাকূলে’, ‘পাড়াগাঁ’, ‘বর্ষা’, ‘গার্হস্থ্যচিত্র’, ‘প্রজাপতি’, ‘জ্যোৎস্না’, ‘কাননে’, ‘পর্বতপ্রদেশ’ প্রভৃতি। দাম্পত্য প্রণয়ের কবিতার মধ্যে—‘প্রেম’, ‘পিপাসা’, ‘সুধা না গরল’, ‘উৎকন্ঠিতা,।‘প্রিয়তম’, ‘বাঁশরী’ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য।

আভাষ (১৮৯০)

গিরীন্দ্রমােহিনী দেবীর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘আভাষ’, প্রকাশিত হয় ১৮৯০সালে। গিরীন্দ্রমােহিনী গ্রন্থাবলীর ১ পৃষ্ঠা থেকে ১১১ পৃষ্ঠায় মােট ১৫৫টিছাে ট-বড় মাপের কবিতার সমন্বয়ে এই গ্রন্থ। এখানে স্থান পেয়েছে নানান

স্বাদের রচনা,-প্রকৃতি, প্রেম, ঈশ্বরের প্রতি কবির নিবেদন, কবির জীবনেরচলার পথের অতীত এবং বর্তমানের নানান স্মৃতি বিষয়ক কবিতা এবং নারীর

নানান অবস্থাকে আশ্রয় করে বেশ কিছু কবিতা।

প্রকৃতি বিষয়ক কবিতাগুলি যথাক্রমে—‘প্রকৃতি’, ‘বাদল’, ‘গােধূলী, ‘গ্রাম্য-সন্ধ্যা’, ‘কোজাগর নিশি’, ‘বর্ষা’, ‘শিশির’, ‘সায়াহ্নে’, প্রভৃতি-

” হৃদয় পরাণ মাের, অইরূপে সদা ভাের,

 আকুল হয়েছে আঁখি অইরূপ-সুধা পিয়া। “

শৈশবের স্মৃতি কবিকে স্মরণ করায় জীবনের ফেলে আসা দিনগুলি-

“পড়িছে মনেতে মায়ের কাছেতে ভাই, বােন, সখা-সখী,

কত গল্প শুনি কত কি কাহিনী উপকথা ‘চখা-চথী’ “

‘প্রেম’, ‘অলসপ্রেম’, ‘অতৃপ্তি’, ‘পিপাসা’, ‘অভিনয়’ প্রভৃতি কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রেমের অভিব্যক্তি-

“ঘরে বসি পায় দেখা, প্রেম অন্ধরে ! “

নারীর কথা দেখি কবির প্রায় সবকটি কাব্যগ্রন্থেই, এ-গ্রন্থেও রচিত আছে বেশ কয়েকটি কবিতা, যথাক্রমে—‘অবলা’, পতিতা’, ‘পঠ-মঞ্জরী’, ‘অভাগিনী’ প্রভৃতি।

শিখা (১৮৯৬)

কবির এ-গ্রন্থখানির প্রকাশকাল ১৮৯৬ সাল। প্রকাশক শ্রী সুরেশচন্দ্র সমাজপতি। গিরীন্দ্রমােহিনী গ্রন্থাবলীর ২৬৭ পৃষ্ঠা থেকে ৩৫৬ পৃষ্ঠা স্থান জুড়ে ‘শিখা। ছােট-বড় ভিন্নমাপের মােট ছিয়াত্তরটি কবিতা, নানান স্বাদের রচনায় এ-কাব্যগ্রন্থটি পরিপূর্ণ।

অর্ঘ্য (১৯০২)

_ এ গ্রন্থখানি প্রকাশিত হয় ১৯০২ সালে (১৩০১ বঙ্গাব্দে, ১১ই আশ্বিন, মহালয়া)। গিরীন্দ্রমােহিনী গ্রন্থাবলীর ১২১ থেকে ১৭৭ পৃষ্ঠা, এ-কাব্য গ্রন্থে

পঁয়তাল্লিশটি কবিতা স্থান পেয়েছে।

স্বদেশি(১৯০৬)

গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯০৬ সালে। এ-গ্রন্থের কবিতাগুলির মধ্যে স্বদেশিকতার ছোঁয়া রয়েছে। আঠারােটি কবিতা যথাক্রমে,—‘আশীৰ্বাদ’, ‘রাখী সংক্রান্তি’, ‘আহ্বান গীত’, ‘যশােদার প্রতি কৃষ্ণের উক্তি’, ‘শ্যামাপূজা’, ‘অঙ্গচ্ছেদ’, ‘রাখীমন্ত্র’, ‘মাতৃ-স্তোত্র’, ‘মিলন গীত’, ‘আগমনী’, ‘বঙ্গে ভঙ্গে কৃষকের গান’, ‘শিবাজী উৎসব’, ‘আদেশবানী, শ্যামাসঙ্গীত’, ‘কে যাবে?’, ‘আত্মদ্রোহিতা, ঋণশােধ’, ‘সমুদ্র গর্জন শ্রবণে’, সমন্বয়ে গিরীন্দ্রমােহিনী গ্রন্থাবলীর ৪১১-৪৩৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত স্থানে কবির এ নিবেদনে মুক্তকণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে স্বদেশের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সেই সঙ্গে স্বদেশবাসীকে উদ্দীপিত হবার আহ্বান-

“ঝটিকার মত আয়—উচ্ছল-

—উদ্দাম বেগে ছুটিয়া—

ঘরভরা মাের সাধের ভাণ্ডার।

চোরে ঐ নিল লুটিয়া।”

সিন্ধুগাথা (১৯০৭)

‘সিন্ধুগাথা’ গ্রন্থটির প্রকাশকাল ১৩১৩ বঙ্গাব্দ। গিরীন্দ্রমােহিনী গ্রন্থাবলীর ৩৫৭ পৃষ্ঠা থেকে ৪০৯ পৃষ্ঠার মধ্যে নিবন্ধ আছে সিন্ধুগাথার কবিতাগুলি, মােট আটত্রিশটি কবিতা, যথাক্রমে, ‘সিন্ধু’, ‘সমুদ্রদর্শনে’, ‘জলধি’, ‘আমাদের কুটীর’, ‘অভিশপ্তা’, ‘ডলফিনােজ’, ‘অচেনা’, ‘নব-বৈধব্য’, ‘চিত্রে’, ‘উপেক্ষিত’, ‘স্বপ্ন সম্ভাষণ’, ‘পালিত’, ‘নিরাভরণা’, ‘সমুদ্রস্নানে’, ‘মধ্যাহ্নে সমুদ্র’,‘ অপরাহ্নে’, ‘সন্ধ্যায়’, ‘পারাবার’, ‘খেলা’, ‘লুকোচুরি’, ‘প্রবাসে বর্ষা’, ‘শ্রাবণে’, বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘স্বাগত’, ‘সীমাদ্রি শিখরে’, ‘নদী-বধূ’, ‘তমসাতীরে’, ‘আয়েষা’,‘ভাবনা’, ‘ধীরে’, ‘শিখাও’, ‘পূর্ণিমায়’, ‘মুগ্ধা’, ‘মধুমাসে মাধবী’, ‘চিত্র’, ‘সমুদ্র-গর্জন-শ্রবণে’, ‘হৃদয় ও সিন্ধু’, ‘সিন্ধুর প্রতি বিদায়ােক্তি।

জনৈক হিন্দু মহিলার পত্রাবলী (১৮৭২, প্রবন্ধ)

গিরীন্দ্রমােহিনীর প্রথম রচনা প্রকাশের ঘটনাটি খুব কৌতুকপ্রদ। বিবাহের পর তিনি স্বামীকে গদ্যে পদ্যে যে-সব পত্র লিখেছিলেন, তাকে না জানিয়ে নরেশচন্দ্র সেই পত্রগুলি জনৈক হিন্দু মহিলার পত্রাবলী’ (১৮৭২) এই নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।

•             বুড়োর অ্যালবাম(কৌতুক রচনা)

•             সন্ন্যাসিনী বা মীরাবাঈ (১৮৯২, ঐতিহাসিক নাটক কাব্য)

ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্রের পরিচয় দাও।
গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কাব্যপ্রতিভার পরিচয় দাও।
মধুসূদন দত্তের রচিত দুটি প্রহসনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
সামাজিক উপন্যাস রচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।
সামাজিক উপন্যাস রচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।
মধুসূদন দত্তের রচিত দুটি প্রহসনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্রের পরিচয় দাও।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading