কামরূপী উপভাষার তিনটি করে ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
কামরূপী উপভাষা বা কামরূপী বাংলা ভাষার এক বিশেষ উপভাষা, যা মূলত পশ্চিম আসামের কামরূপ অঞ্চলে প্রচলিত। এই উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি অন্যান্য বাংলা উপভাষার থেকে কিছুটা ভিন্ন। নিম্নে কামরূপী উপভাষার তিনটি করে ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো।
১. ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
(i) ‘অ’ ধ্বনির ব্যবহারে পরিবর্তন কামরূপী উপভাষায় সাধারণত ‘অ’ ধ্বনি অনেক সময় ‘আ’ বা ‘ও’ হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ:
- অল্প → আল্প
- অধিকার → অধিকাৰ
এটি কামরূপী ভাষার এক উল্লেখযোগ্য ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, যেখানে ‘অ’ ধ্বনি ভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়।
(ii) সজ্ঞা ও অব্যয় শব্দের শেষে ‘-ই’ যোগ হওয়া কামরূপী উপভাষায় অনেক সজ্ঞা ও অব্যয় শব্দের শেষে ‘-ই’ ধ্বনি যোগ হয়, যা সাধারাণ বাংলা ভাষায় থাকে না। উদাহরণ:
- তুমি → তুমি–ই
- আমি → আমি–ই
এটি কামরূপী উপভাষার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেখানে মূল শব্দের শেষে ‘-ই’ যুক্ত হয়ে জোরদারভাবে ব্যবহার করা হয়।
(iii) ‘চ’ ও ‘ঝ’ ধ্বনির পরিবর্তন কামরূপী উপভাষায় ‘চ’ ও ‘ঝ’ ধ্বনির উচ্চারণ সাধারণত ভিন্ন হয়, যা অন্যান্য বাংলা উপভাষার থেকে আলাদা। উদাহরণ:
- চাল → ছাল
- ঝাল → ঝাল
এভাবে ‘চ’ ধ্বনি অনেক সময় ‘ছ’ হয়ে যায়, এবং ‘ঝ’ ধ্বনির উচ্চারণের মধ্যে স্থানান্তর ঘটে।
২. রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
(i) রূপান্তরিত ক্রিয়া কামরূপী উপভাষায় ক্রিয়াগুলোর রূপান্তর ঘটতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ:
- করতে → করবা
- যাবো → যাম
এটি কামরূপী উপভাষার একটি প্রচলিত বৈশিষ্ট্য, যেখানে ক্রিয়াপদগুলি সাধারণত পরিবর্তিত হয় এবং অল্প পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।
(ii) বিশেষ্য শব্দে ‘-ও’ বা ‘-হ’ যোগ হওয়া কামরূপী উপভাষায় কিছু বিশেষ্য শব্দে ‘-ও’ বা ‘-হ’ যুক্ত হয়ে শব্দের ব্যবহার হয়, যা অন্য উপভাষায় দেখা যায় না। উদাহরণ:
- ঘর → ঘরও
- খাবার → খাবারহ
এটি কামরূপী উপভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, যা শব্দের শেষে বিশেষ্য রূপে একটি অতিরিক্ত উপসর্গ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তার নতুন রূপ গঠন করে।
(iii) সপদ পরিবর্তন কামরূপী উপভাষায় কিছু সপদ যেমন বিশেষ্য, ক্রিয়া বা বাচ্য ফর্মের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ:
- তুমি → তুুই
- সে → সেই
এটি ভাষার সাধারণ রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের একটি উদাহরণ, যেখানে সপদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এবং এটি বাক্যের ভাবের পরিবর্তন ঘটায়।
উপসংহার
কামরূপী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি বাংলা ভাষার একটি আকর্ষণীয় আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে ভাষার স্বতন্ত্রতা, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির গভীরতা প্রতিফলিত হয়। কামরূপী উপভাষার এই বৈশিষ্ট্যগুলো বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে।