কবি ঈশ্বর গুপ্তের কবি প্রতিভা আলোচনা করো। অথবা, ‘যুগসন্ধির কবি’ হিসেবে কে পরিচিত? তাঁর কবি প্রতিভা আলোচনা করো।

অথবা,যুগসন্ধির কবি হিসেবে ঈশ্বর গুপ্তের অবদান

‘যুগসন্ধির কবি’ হিসেবে চিহ্নিত কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। কবিওয়ালাদের উত্তরাধিকারী ঈশ্বর গুপ্ত সাংবাদিকসুলভ মন নিয়ে বাংলা কাব্যজগতে প্রবেশ করলেও আধুনিকতার সূত্রপাত করে গিয়েছিলেন। ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকা সম্পাদনা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তবে সমস্ত পরিচয়কে অতিক্রম করে বড়ো হয়ে উঠেছে কবি ঈশ্বর গুপ্ত পরিচয়। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন-“ঈশ্বরচন্দ্রের এই মহৎ গুণ ছিল যে, তিনি খাঁটি জিনিস বড়ো ভালবাসিতেন, মেকির বড়ো শত্রু।”

বিচিত্র বিষয় নিয়ে ঈশ্বর গুপ্ত কবিতা লিখেছেন। স্বদেশ, সমাজ, ইংরেজ সরকারের অত্যাচার সমস্ত বিষয় নিয়ে তিনি কবিতার সৃষ্টিভুবন ভরিয়ে তুলেছেন। সমাজের নানা অধঃপতিত অবস্থা তিনি তুলে ধরেছেন। আবার কখনও যুক্তির আশ্রয় নিয়ে বাঙালির ধর্মবিশ্বাসে আঘাত এনেছেন। ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস হেনে তিনি বাঙালি পাঠককে শোনান-

“তোমার বদনে যদি, না সরে বচন।

কেমনে হইবে তবে, কথোপকথন।।

আমি যদি কিছু বলি, বুঝে অভিপ্রায়।

ইসেরায় ঘাড় নেড়ে, সায় দিও তায়।।”

ঈশ্বর গুপ্ত ইতিহাস-সচেতন, স্বদেশবর্তী হলেও নারীদের সম্পর্কে তেমন স্বাধীনচেতা ছিলেন না। কেননা বিমাতা-শাসিত সংসারে বড়ো হওয়ার ফলে নারী সম্পর্কে তাঁর মনে

বিরূপ ধারণার জন্ম হয়েছিল। তাই নারীদের ব্যঙ্গ করে লিখেছেন-

লক্ষ্মী মেয়ে যারা ছিল “

তারাই এখন চড়বে ঘোড়া

ঠাটঠমকে চালাক চতুর

সভ্য হবে খোড়া থোড়া।”

মিশনারি অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি যেমন প্রতিবাদীকণ্ঠে গর্জে উঠেছেন, তেমনি সমাজকে দেশকে নবযুগের চেতনায় দীক্ষিত করতে চেয়েছেন। বিচিত্র বিষয় নিয়ে তিনি কাব্যে নেমেছিলেন। সেই বিচিত্র বিষয়ে ব্যঙ্গের সঙ্গে হাস্যরসও ফুটে উঠেছে তপসে মাছ থেকে আনারস ও পাঁঠাকে তিনি কবিতার বিষয় করে তুলতে পারেন। পাঁঠা নিয়ে তিনি সরস হাস্যরসে লিখে বসেন-

      “রসভরা রসময় রসের ছাগল তোমার কারণে আমি হয়েছি পাগল তুমি যার পেটে যাও সেই পুণ্যবান তুমি সাধু সাধু তুমি ছাগীর সন্তান’

এসমস্ত গুণ অতিক্রম করে বড়ো হয়ে উঠেছে ঈশ্বর গুপ্তের স্বদেশচেতনা, যা উনিশ শতকে নবজাগরণের কালে বিশেষ প্রয়োজন ছিল। আসলে ঈশ্বর গুপ্তই প্রথম আধুনিক কবি, যিনি বাঙালিকে আগাতে চেয়েছিলেন। সেইসঙ্গে ছিল বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা। তাই তিনি স্বকণ্ঠে উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন-

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading