উচ্চারণস্থান অনুযায়ী বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনি গুলির শ্রেণিবিন্যাস করো।

Table of Contents

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ কী ভাবে হয়

উৎপত্তিগত দিক দিয়ে স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির একটি মূলগত পার্থক্য রয়েছে। এই আলোচনায় আমরা সেই মৌলিক পর্থক্যটিতেই আলোকপাত করতে চেষ্টা করব। ব্যঞ্জনধ্বনির সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়: যে ধ্বনিকে উচ্চারণ করার জন্য শ্বাসবায়ুকে বাগ্যন্ত্রের কোথাও না

কোথাও বাধা দিতে হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

উচ্চারণ স্থান অনুসারে ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ :

বাংলার অধিকাংশ ব্যঞ্জন উচ্চারিত হয় মুখবিবরে। অর্থাৎ বাংলা ব্যঞ্জনগুলি উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু মুখবিবরের কোথাও না কোথাও বাধা পায়। শ্বাসবায়ু এই বাধা অতিক্রম করে প্রবাহিতহওয়ার সময় ব্যঞ্জনগুলি উচ্চারিত হয়।

শ্বাসবায়ুকে বাধা দেওয়ার কাজটি করে মূলত দুটি অঙ্গ-জিহ্বা ও নিচের ঠোঁট (বা অধর)। শ্ববাসবায়ুকে বাধা দেওয়ার জন্য জিহ্বা বা নিচের ঠোঁট উপরে উঠে কোনো একটি স্থানকে স্পর্শ করে অথবা কাছাকাছি যায়। জিহ্বা ও নিচের ঠোঁটকে এই কারণে উচ্চারক অঙ্গ” বলে এবং উচ্চারক অঙ্গ যে স্থানকে স্পর্শ করে অথবা যে স্থানের কাছাকাছি যায় সেই স্থানকে বলে উচ্চারণ স্থান। আমরা এখন বাগযন্ত্রের প্রধান উচ্চারণ স্থানগুলো চিনে নেব এবং একই সঙ্গে এইসব স্থানে উচ্চারিত ব্যঞ্জনগুলি জেনে নেব।

কণ্ঠ–কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন

কণ্ঠ হল আমাদের মুখবিবরের সবচেয়ে ভিতরের দিকের উপরের অংশ। অর্থাৎ মুখের যেটা ছাদ তার একেবারে পিছন দিকটাকে কণ্ঠ বলে। এখানে কোনো ধ্বনি উচ্চারণ করার জন্য জিহ্বার পিছন দিকটা এখানে স্পর্শ করে বা কাছাকাছি যায়(যদিও বাংলায় এই স্থানে যত ব্যঞ্জন উচ্চারিত হয় তার সবগুলির ক্ষেত্রেই স্পর্শ ঘটে)। এই স্থানে উচ্চারিত ব্যঞ্জনগুলিকে বলে কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন। বাংলায় ক,খ,গ,ঘ,ও—এই ব্যঞ্জনগুলি কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন।

তালু–তালব্য ব্যঞ্জন

তালু হল মুখগহ্বরের উপরের সামনের অংশটি। দাঁতের গোড়ায় যে উঁচু যত অংশটা আছে, তার

থেকে একটু পিছিয়ে গেলে যে অপেক্ষাকৃত নিচু অংশটা পাবো সেটাই তালু। জিভ দিয়ে এই

ব্যাপারগুলো বুঝে নিতে হবে। এছাড়া উদাহরণের ধ্বনিগুলো উচ্চারণ করার সময় স্পর্শটা

কোথায় হচ্ছে সেটা দেখেও স্থানগুলো চিনে নেওয়া যায়। যাই হোক, তালুতে কোনো ব্যঞ্জনকে

উচ্চারণ করার জন্য জিহ্বার সামনের দিকের উপরের অংশ তালুতে স্পর্শ করে বা কাছাকাছি যায়

এখানে উচ্চারিত ব্যঞ্জনগুলিকে বলে তালব্য ব্যঞ্জন।

বাংলায় চ,ছ,জ,ঝ,ঞ,ল,শ-এইগুলি তালব্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

মূর্খা–মূর্ধণ্য ব্যঞ্জন

মূর্ধা হল তালুর সবচেয়ে উঁচু অংশ। এটি তালুর পেছনের অংশ এবং কণ্ঠের সামনের অংশ। এখানে স্পর্শ করার জন্য জিহ্বার ডগার অংশটি ব্যবহার করতে হয়। এখানে স্পর্শ করার জন্য জিহ্বার ডগা উল্টে নিয়ে জিহ্বার তলার অংশটা দিয়ে স্পর্শ করতে হয়। মূর্ধায় উচ্চারিত ব্যঞ্জনগুলিকে মূর্ধণ্য ব্যঞ্জন বলে। বাংলায় মূর্ধণ্য ব্যঞ্জনগুলি হল, ট,ঠ,ড,ঢ,ণ(এর নাম ‘মূর্ধণ্য-ণ; শুধু “মূর্ধণ্য বলা উচিত নয়),ড,ঢ়,ষ

দন্ত–দন্ত্য ব্যঞ্জন

দন্ত মানে দাঁত। এখানে ধ্বনি উচ্চারণ করার জন্য জিভের ডগা দাঁতে স্পর্শ করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত স্পর্শ দাঁতের গোড়ায় বা দন্তমূলে হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত অভ্যাসও এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মোট কথা, দন্ত বা দন্তমূল, দুই জায়গাতেই একই ব্যঞ্জনের উচ্চারণ সম্ভব। দন্তে উচ্চারিত ধ্বনিগুলি দন্ত্য ধ্বনি নামে পরিচিত। বাংলা দন্ত্য ব্যঞ্জনগুলি হল, ত,থ,দ,ধ,ন।

ওষ্ঠ–ঔষ্ঠ্য ব্যঞ্জন

ওষ্ঠ বলতে বোঝায় উপরের ঠোঁট। নিচের ঠোঁটের পোষাকি নাম অধর। অধর ওষ্ঠকে স্পর্শ করে শ্বাসবায়ুকে বাধা দিয়ে যে ব্যঞ্জনগুলি সৃষ্টি করে, তাদের ঔষ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে। তবে অনেক সময় নিচের ঠোঁট দাঁতকেও স্পর্শ করে বা কাছে যায়। তবে এরকম ঘটনা কোনো বাংলা ব্যঞ্জনের সঠিক উচ্চারণের ক্ষেত্রে ঘটে না। বাংলা ঔষ্ঠ্য ব্যঞ্জনগুলি হল, প,ফ,ব,ভ,ম এবং অন্তঃস্থ

আরো পড়ুন-

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করো। এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

টীকা লেখো: সমীভবন, অপিনিহিতি।

উপসর্গযোগে তিনটি শব্দ গঠন করো।

সমাস কাকে বলে ? সমাস কয় প্রকার ও কী কী ? সমাসের যে-কোনো দুটি প্রকারভেদের বিস্তৃত আলোচনা করো।

প্রত্যয় কাকে বলে ? বাংলা প্রত্যয় বিষয়ে বিশদে আলোচনা করো।

বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে ? বিপর্যাস বা বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে

উদাহরণসহ সংজ্ঞা দাও- স্বরসংগতি, সংকর শব্দ, জোড়কলম, বর্ণ বিপর্যয়।

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করে এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।

বিভক্তি কাকে বলে ? শূন্য বিভক্তি বলতে কী বোঝ ? তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading