আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংজ্ঞা (Definition of International Relations):
একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসাবে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিষয়টি আজকের দিনে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন বিশেষজ্ঞ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞা নির্দেশ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্দেশ করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয় নি। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা। কারও কারও মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শুধু রাষ্ট্রীয় স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বিভিন্ন বেসরকারি ও আধাসরকারি পর্যায়ের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করবে। অনেকে আবার ক্ষমতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে আলোচনা করার পক্ষপাতী।
কে. জে. হলস্টি (K.J. Holsti)-র মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বলতে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। আবার পামার ও পারকিন্স (Palmer and Perkins)-এর মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্বসমাজের সকল মানুষ ও গোষ্ঠীর সকল সম্পর্ক, মানুষের জীবন, ক্রিয়াকলাপ ও চিন্তার প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি, চাপ এবং প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। এন. জি. প্যাডেলফোর্ড এবং জি. এ. লিঙ্কনের মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচ্য বিষয় বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী সংস্থা, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের আলোচনার সঙ্গে যুক্ত।
অধ্যাপক মর্গেনথউ (H. J. Morgenthau) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কথাটির চাইতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি কথাটি ব্যবহারের পক্ষপাতী। কারণ তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল মূলত ক্ষমতার লড়াই। নিজ রাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও অক্ষুণ্ণ রাখা এবং অপরাপর যোসেফ ফ্রাঙ্কেল (Joseph Frankel) তাঁর International Relations নামক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন যে, নতুন তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াবদ্ধকরণ, বৈজ্ঞানিক কৌশল গড়ে তোলা ও নিজস্ব ধারণা ও ভাষা গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্বাতন্ত্র্য অর্জন করেছে। বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যবস্থাজ্ঞাপক দৃষ্টিভঙ্গি, গেম থিওরি, যোগাযোগ তত্ত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক তত্ত্ব প্রভৃতি যেসব বিভিন্ন তত্ত্ব আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলোচনায় ব্যবহৃত হয়, তা এই শাস্ত্রের স্বাতন্ত্র্যকেই প্রকাশ করে। পরিশেষে বলা যায়, সমাজ বিজ্ঞানের অন্যতম নবীন বিষয় হয়েও (১৯১৯ সালে এর আনুষ্ঠানিক জন্ম হয়) এবং নানাপ্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে যথেষ্ট সজীব ও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছে