আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বয়স্ক শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য কী? বয়স্ক শিক্ষার লক্ষ্য ও সমস্যা ব্যাখ্যা কর। What is the difference between formal education and adult education? Explain the aims and problems of adult education.

Table of Contents

আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বয়স্ক শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য কী? বয়স্ক শিক্ষার লক্ষ্য ও সমস্যা

আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বয়স্ক শিক্ষার মধ্যে মূলত শিক্ষার কাঠামো, পদ্ধতি, উদ্দেশ্য, এবং শিক্ষার্থীদের ধরনগত পার্থক্য বিদ্যমান। এই পার্থক্যগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বয়স্ক শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য:

১. শিক্ষার্থীর বয়স এবং স্তর:

  • আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: সাধারণত শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং তরুণদের জন্য নির্ধারিত। এটি স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে থাকে এবং শিক্ষা পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পন্ন হয়।
  • বয়স্ক শিক্ষা: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত, যারা সাধারণত জীবনের পরে অংশগ্রহণ করেন। এটি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং যে কোনো সময় শুরু করা যায়।

২. শিক্ষা কাঠামো:

  • আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: কাঠামোবদ্ধ এবং পূর্বনির্ধারিত পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে। শিক্ষার স্তর অনুযায়ী সিলেবাস নির্ধারিত থাকে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়।
  • বয়স্ক শিক্ষা: কাঠামোবদ্ধ হলেও আরও নমনীয়। প্রাপ্তবয়স্কদের চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়। এটি প্রায়ই আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার পরিবর্তে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে।

:

৩. শিক্ষা পরিবেশ

  • আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: এটি বিদ্যালয়, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হয়। শিক্ষার পরিবেশ আনুষ্ঠানিক এবং নির্ধারিত সময়সূচির মধ্যে থাকে।
  • বয়স্ক শিক্ষা: এটি কমিউনিটি সেন্টার, কাজের স্থান, বা অনলাইন মাধ্যমের মতো বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হতে পারে। শিক্ষার পরিবেশ অনেক বেশি নমনীয় এবং ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৪. শিক্ষার উদ্দেশ্য:

  • আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: মূলত একাডেমিক দক্ষতা, সার্টিফিকেট অর্জন এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি প্রদান করা হয়। এটি শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট পেশার জন্য প্রস্তুত করে।
  • বয়স্ক শিক্ষা: জীবনের অভিজ্ঞতা, বাস্তব জ্ঞান এবং কর্মমুখী দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। এটি ব্যক্তিগত উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, এবং সামাজিক সচেতনতার দিকে লক্ষ্য রাখে।

৫. শিক্ষাদানের পদ্ধতি:

  • আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: এটি সাধারণত একটি শিক্ষক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে, যেখানে শিক্ষক বা অধ্যাপক নির্ধারিত সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান করেন।
  • বয়স্ক শিক্ষা: এখানে শিখন-পদ্ধতি অনেকটা শিখন-শেখানোর পারস্পরিক মডেলের উপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থীদের পূর্বের অভিজ্ঞতা, প্রয়োজন এবং আগ্রহকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বয়স্ক শিক্ষার লক্ষ্য:

১. সাক্ষরতার উন্নতি:


বয়স্ক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাক্ষরতা বৃদ্ধি করা। এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রমে সহায়ক এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। সাক্ষরতা শুধু পড়া-লেখার ক্ষমতাই নয়, বরং গণিত, সমস্যা সমাধান এবং অন্যান্য মৌলিক দক্ষতার বিকাশেও সহায়ক।

২. কর্মমুখী দক্ষতার বিকাশ:


বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্করা কর্মমুখী দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, যা তাদের কর্মজীবনে উন্নতি সাধন করে। কারিগরি প্রশিক্ষণ, কুটির শিল্প, এবং অন্যান্য পেশাদার দক্ষতার মাধ্যমে তারা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারেন এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারেন।

৩. সামাজিক সচেতনতা ও ক্ষমতায়ন:


বয়স্ক শিক্ষা তাদের সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম করে। এটি সমাজের সমতা, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. জীবনমানের উন্নতি:


বয়স্ক শিক্ষা প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হয়। স্বাস্থ্য সচেতনতা, অর্থনৈতিক জ্ঞান, এবং সামাজিক নৈতিকতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুখী জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়।

৫. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার:


বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্করা তাদের নাগরিক অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়। এটি তাদের সমাজের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম করে এবং তাদের একটি সচেতন ও জবাবদিহিমূলক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।

বয়স্ক শিক্ষার সমস্যা:

১. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা:


অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধার কারণে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী নন। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা এবং প্রথাগত ধারণা তাদের শিক্ষার পথে প্রধান অন্তরায়।

২. অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা:


বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন না। পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা শিক্ষার সময় ও সুযোগ খুঁজে পান না।

৩. শিক্ষার মান ও উপকরণের অভাব:


প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রশিক্ষিত শিক্ষক, উপকরণ এবং পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারলে প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম সফল হয় না।

৪. সচেতনতার অভাব:


প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা সম্পর্কে যথাযথ সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাদের জীবনের এই পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না, যার ফলে তারা এই উদ্যোগে অংশগ্রহণে অনিচ্ছুক হন।

৫. অনানুষ্ঠানিক কাজের চাপ:


বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়ই কাজের চাপের কারণে শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে পারেন না। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় কৃষিকাজ বা অন্যান্য দৈনন্দিন কাজের কারণে শিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।

৬. প্রণোদনার অভাব:


অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য শিক্ষার প্রণোদনা যথেষ্ট আকর্ষণীয় হয় না। তাদের জন্য এমন একটি প্রণোদনামূলক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন যা তাদের শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করবে।

উপসংহার:

আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বয়স্ক শিক্ষার মধ্যে গঠনগত ও কার্যকরী পার্থক্য রয়েছে। বয়স্ক শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার সুযোগ দেয় এবং ব্যক্তি ও সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এই শিক্ষার কার্যকর বাস্তবায়নে কিছু সমস্যার সমাধান প্রয়োজন, যার মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি আরও সফল এবং কার্যকর হতে পারে।

Share
error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading