আদর্শবাদ বা ভাববাদের সমালোচনা রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত ভাববাদী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের বিভিন্ন বিরূপ সমালোচনা করা হয়।

আদর্শবাদ বা ভাববাদের সমালোচনা-

(১) আদর্শবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা আলোচনার ক্ষেত্রে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে পুরোপুরি পরিহার করে কেবল ভাব ও কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। বাস্তব উপাদানকে অস্বীকার করে ভাববাদ রাষ্ট্রকে বাস্তবতাবর্জিত আদর্শের দৃষ্টিতে দেখেছে। তাই মতবাদটি অবাস্তব ও অধিবিদ্যামূলক।

(২) ভাববাদে রাষ্ট্রের উপর চরম উৎকর্ষ আরোপ করা হয়েছে। রাষ্ট্রকে অবাধ ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। এই কারণে এই মতবাদ ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রের বিরোধী। জোড বলেছেন: “The absolute theory of the State is in fact inimical to individual freedom. “হবহাউস (Hobhouse) -ও যথার্থই বলেছেন যে, আদর্শবাদে যাকে প্রকৃত স্বাধীনতা বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা স্বাধীনতার অস্বীকার মাত্র। ভাববাদে ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের হাতেই ক্রীড়নকে পরিণত করা হয়েছে।

(৩) ভাববাদে রাষ্ট্রকে অভ্রান্ত এবং এই কারণে অপ্রতিরোধ্য বলা হয়েছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন রকম বিরোধিতার অধিকারকে স্বীকার করা হয়নি। তার ফলে রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত হয়েছে।

(৪) আদর্শবাদ ব্যক্তির প্রকৃত ইচ্ছা ও অপ্রকৃত ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে আইন ও স্বাধীনতাকে অভিন্ন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। এও ঠিক নয়। আইন ও স্বাধীনতা কখনই অভিন্ন নয়।

(৫) জার্মান ভাববাদী দার্শনিক হেগেলের ধারণা থেকে পরবর্তী কালে নাৎসীবাদ ও ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হয়েছে।

আদর্শবাদ বা ভাববাদের মূল্যায়ন:

উপরিউক্ত বিরূপ সমালোচনা সত্ত্বেও রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ভাববাদের তাত্ত্বিক তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় না।

•             (১) রাষ্ট্রের প্রতি ব্যক্তির আনুগত্যের প্রয়োজনীয়তাকে কোনক্রমে অগ্রাহ্য করা যায় না।

•             (২) আবার রাষ্ট্রই হল ব্যক্তির সকল অধিকারের স্রষ্টা ও রক্ষক। এ বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। ব্যক্তির স্বার্থেই রাষ্ট্রীয় প্রাধান্যের প্রয়োজনীয়তা আছে।

•             (৩) সর্বোপরি রাষ্ট্র নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে নাগরিকদের আনুগত্য দাবি করতে পারে— ইংরেজ আদর্শবাদী দার্শনিক গ্রীণের এই বক্তব্য অভ্রান্ত।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading