অমিত্রাক্ষর ছন্দ বাংলা কবিতায় কে, কোথায় প্রথম প্রবর্তন করেন? এই ছন্দের প্রবর্তক কীভাবে পয়ারের বেড়ী ভাঙেন? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।

অমিত্রাক্ষর ছন্দ বাংলা কবিতায় কে, কোথায় প্রথম প্রবর্তন করেন

বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি প্রথমে তার মহাকাব্য তিলোত্তমাসম্ভব-এ এই ছন্দ ব্যবহার করেন। এরপর তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি মেঘনাদবধ কাব্য-এ এই ছন্দের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে।

অমিত্রাক্ষর ছন্দের বৈশিষ্ট্য:

  • এটি অমিলযুক্ত (অমিত্র) দশ-অক্ষর বা চৌদ্দ-অক্ষরের ছন্দ।
  • প্রতিটি লাইনে সমসংখ্যক মাত্রা বা অক্ষর থাকে, তবে পঙক্তিগুলির শেষে মিল নেই।
  • ভাষার গতি ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা বেশি থাকে।

পয়ার ছন্দের বেড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া:

পয়ার ছন্দে প্রত্যেক পঙক্তির শেষে মিল থাকে, যা কবিতার স্বাধীন গতিধারাকে বাঁধা দেয়। মাইকেল অমিত্রাক্ষর ছন্দে মিলের শৃঙ্খল ভেঙে কবিতাকে মুক্ত ও গতিশীল করে তোলেন। এতে ভাষার গাম্ভীর্য এবং মহাকাব্যিক ভাবনার গভীরতা বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণ:

মেঘনাদবধ কাব্যের একটি অংশ (অমিত্রাক্ষর ছন্দ):

চলিছে আহোরাত্রি স্রোতে, বিচিত্র ভাবের লহরী।
ঘনঘটা চন্দ্রের তলে; কটাক্ষ হানি জ্বলিছে তারা।

এই পঙক্তিতে শব্দের গতি ও ভাবনায় এক প্রকার মহাকাব্যিক গভীরতা রয়েছে, যা পয়ার ছন্দে পাওয়া সম্ভব নয়। পয়ার ছন্দের নিয়মিত মিলের পরিবর্তে এখানে একটি ছন্দময়তার স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষিত হয়েছে।

পয়ার ছন্দের উদাহরণ (তুলনায়):

বিধির বাম হস্তে কেন লেখ মোর নাম,
নিষ্ঠুর বিধাতা তুমি, হৃদয়ে করছ ক্ষাম।

এই ধরনের মিলযুক্ত পয়ার ছন্দের তুলনায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ অনেক বেশি স্বাধীনতা ও গভীরতার সুযোগ সৃষ্টি করে।

উপসংহার:
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করে কাব্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। এই ছন্দ পয়ার ছন্দের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বাংলা ভাষায় মহাকাব্যিক ভাব প্রকাশের একটি উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

Share
Scroll to Top

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading