‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে ক’টি খণ্ড আছে?
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য মহাকাব্য, যা সাধককবি বিদ্যাপতির রচনা। এই কাব্যটি বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে এবং এতে শ্রীকৃষ্ণের জীবনের বিভিন্ন দিক এবং কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে।
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ খণ্ডগুলির উল্লেখ?
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি মোট ছয়টি খণ্ডে বিভক্ত। প্রতিটি খণ্ডই শ্রীকৃষ্ণের জীবনের একটি নির্দিষ্ট অংশ বা দিককে চিত্রিত করে। খণ্ডগুলির নাম এবং তাদের বিষয়বস্তু নিম্নরূপ:
প্রথম খণ্ড: কংসবধ
এই খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম এবং কংস রাজার প্রতি শ্রীকৃষ্ণের প্রতিশোধ গ্রহণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। কংস রাজা শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পূর্বাভাস পেয়েছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য নানা চেষ্টা করেছিলেন। এই খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পর তাঁর প্রাথমিক জীবন এবং কংস রাজার সঙ্গে তাঁর প্রথম সংঘাতের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় খণ্ড: মধুসূদন
এই খণ্ডে মধুসূদন নামে পরিচিত শ্রীকৃষ্ণের কীর্তি ও গুণাবলীর বর্ণনা রয়েছে। মধুসূদন নামটি শ্রীকৃষ্ণের আরেকটি উপাধি, যা তাঁর দানব তথা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং তার জয় লাভের প্রতীক। এই খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ড এবং তাঁর সুকৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।
তৃতীয় খণ্ড: ভগবদীশ্বর
এই খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের ভগবদীশ্বর (ভগবান) হিসেবে তার প্রতিষ্ঠা এবং তাঁর দৈবশক্তির বিষয়বস্তু আলোচিত হয়েছে। ভগবদীশ্বর হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের বিশাল ক্ষমতা এবং তাঁর ইষ্টদেবতার পূজা সংক্রান্ত বিষয়াদি এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
চতুর্থ খণ্ড: প্রলয় নাশ
প্রলয় নাশ খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের দ্বাপর যুগের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। এই খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের মাধ্যমে মহাকালের প্রলয় বা ধ্বংসাত্মক শক্তির বিরুদ্ধে জয় লাভের কাহিনী উঠে এসেছে।
পঞ্চম খণ্ড: দীপমালা
দীপমালা খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের জীবনের শান্তিরূপ এবং তাঁর প্রশান্তি ও সমাধির প্রসঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে। এই খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের কীর্তি এবং তাঁর জীবনের শান্তি ও সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে।
ষষ্ঠ খণ্ড: মীরাজি
এই খণ্ডে মীরাজি নামক একাধিক গাথার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন আশ্চর্যজনক কাহিনী এবং তাঁর জীবনের মহান দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। মীরাজি খণ্ডে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন মায়ের প্রতিশোধ এবং নানা অলৌকিক কীর্তির বর্ণনা রয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি বাংলা সাহিত্য এবং ধর্মীয় গীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে, এবং এটি মূলত শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি, কীর্তি, ও জীবনচরিতের চিত্রণ করে। এটি শুধুমাত্র একটি সাহিত্যিক সৃষ্টি নয়, বরং এক ধরনের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ও প্রদান করে।