প্যারীচাদ ও বিদ্যাসাগরের মধ্যে তুলনা

প্যারীচাদ ও বিদ্যাসাগরের পার্থ্যক্য:

(ক) বয়সের বিচারে প্যারীচাদ ছিলেন বিদ্যাসাগরের বয়োজ্যেষ্ঠ। তার জন্ম ১৮১৪ খ্রীস্টাব্দে, আর বিদ্যাসাগরের ১৮২০ খ্রীস্টাব্দে। প্রথম জনের জন্ম কলকাতায়, দ্বিতীয় জনের মেদিনীপুরে। (খ) বিদ্যাশিক্ষা এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জনের ক্ষেত্রেও প্যারীচঁাদ ছিলেন বিদ্যাসাগরের পূর্ববর্তী। নারীশিক্ষা এবং বিধবা-বিবাহ প্রচলন বিদ্যাসাগরের যেমন অমরকীর্তি, তেমনি প্যারীচাদও “স্ত্রীলোকদিগের নিমিত্তে” বন্ধু রাধানাথ শিকদারের সঙ্গে ‘মাসিক পত্রিকা’ প্রকাশ (১৮৫৫ খ্রীঃ) করেছিলেন, ‘নারীকল্যাণমূলক উপন্যাস’ ‘আধ্যাত্মিকা’ এবং স্ত্রীশিক্ষা-বিষয়ক ‘বামাতোষিণী’ প্রভৃতি গ্রন্থ লিখেছিলেন। (গ) সাহিত্যসাধনার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর ছিলেন প্যারীচাদের অগ্রযাত্রী। তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’ প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ খ্রীস্টাব্দে, প্যারীচাদের ‘আলালের ঘরের দুলালে’র (১৮৫৮ খ্রীঃ) এগারো বছর আগে। (ঘ) প্যারীচাদের সাহিত্যসাধনা প্রধানত ব্রাহ্মধর্মের সপক্ষে নিয়োজিত এবং কিছু অংশ থিয়োসফির গূঢ় তত্ত্বে নিবদ্ধ। কিন্তু বিদ্যাসাগর ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে নীরব, তার সাহিত্য সাধনার মূলে মানবচেতনা তথা মানবিক বৈশিষ্ট্যই স্বপ্রকাশ হয়ে উঠেছে। (ঙ) প্যারীচাদ উপন্যাস লেখার সচেতন ভাবনা নিয়ে ‘আলাল’ বা ‘আধ্যাত্মিকা’ প্রভৃতি গ্রন্থ লিখেছিলেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর শুধুমাত্র অনুবাদ করেই তাঁর মধ্যে শৈল্পিক গুণাবলী প্রকাশ করেছিলেন। (চ) কৌতুকপ্রিয়তা, বাস্তববুদ্ধি এবং কথার বয়ান-দক্ষতা ‘আলাল’ রচয়িতা টেকচঁাদ-রূপী প্যারীচাদকে যে প্রথম ঔপন্যাসিকের গৌরবে ভূষিত করেছিল, পরবর্তী গ্রন্থগুলির মধ্যে সেইসব গুণের অভাব তার প্রতিভার পরিণতি নির্দেশ করে না। পক্ষান্তরে বিদ্যাসাগরের প্রথম পর্যায়ে অনুবাদকর্ম থেকে পরবর্তী পর্যায়ের ব্যঙ্গরচনার মধ্যে ভাষারীতির বৈচিত্র্য ও সুপরিণতি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading