নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের পরিচয় দাও।

Table of Contents

অথবা,বাংলা নাট্য সাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান আলোচনা করো

অথবা,বাংলা নাটকে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান আলোচনা করো

বাংলা নাট্য সাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান:

ভূমিকা:

বাংলা নাট্য সাহিত্যে মধুসূদনের পর দীনবন্ধু মিত্রের আবির্ভাব। মাইকেল মধুসূদনের সৃষ্টিতে যে নাটকের সার্থক প্রকাশ ঘটে দীনবন্ধু তাকে আরো পূর্ণ ও বিকশিত করে তোলেন। তিনি মাইকেল-যুগের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার তো অবশ্যই, আধুনিক কালেও তাঁর মর্যাদা ও মহিমা কমেনি। বিশেষত ‘নীলদর্পণ’ নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি যে প্রতিবাদী জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন আজও তা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত। সমসাময়িক সামাজিক জীবনের উজ্জ্বল আলেখ্য হিসাবে তার নাটক গুলির স্বতন্ত্র মর্যাদা রয়েছে।

দীনবন্ধুর প্রথম নাটক ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০) নীলকরদের অত্যাচারের ওপর ভিত্তি করে লেখা প্রায় সত্য কাহিনীর রূপায়ণ। সে সময় নীলকররা বাংলার কৃষকদের জোর করে নীলচাষ করাত। নীলের চাষে চাষীদের কোনো লাভ হত না, তাছাড়া দাদনের টাকা বাকি বকেয়া শোধ ইত্যাদিতে তারা অত্যন্ত পীড়িত হত এবং দেনা ও ঋণসমেত চুক্তির বোঝা তাদের পুরুষানুক্রমে বহন করতে হত। নীলকরেরা তাদের স্বজাতীয় ইংরেজ শাসক এবং গ্রামের দারোগা দেওয়ান প্রমুখের সাহায্যে চাষীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাত। যখন তখন শ্যামচাদের বাড়ি পড়ত চাষীদের পিঠে, তাদের নীলকুঠীতে বন্দী করে রেখে পীড়ন করা হত, এমন কি হত্যাও করা হত, চাষীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হত, তাদের বৌ-ঝিদের ওপর অত্যাচার করা হত, জালজুয়াচুরি প্রতারণা করে চাষীদের ওপর চুক্তির দায়িত্ব দেওয়া হত। সব কিছুর প্রতিবাদে কোনো চাষী আইনের দ্বারস্থ হলে নীলকর সাহেবদের সহযোগী বিচারকরা শেষটুকুও নিঃশেষ করে দিত। বাংলার চাষীরা নীলকরদের ভয়ে ভীত ও সংকুচিত হয়ে থাকত। এরই বিরুদ্ধে দীনবন্ধু মিত্র সরব হলেন, নীলকরদের অত্যাচারের বীভৎস ও নির্মম চিত্র তিনি অঙ্কন করলেন ‘নীলদর্পণ’ নাটকে, দেশের জনমত জাগ্রত হল – মানুষ প্রতিবাদে মুখর হল, মাইকেল মধুসূদনের করা ইংরেজী অনুবাদ ইংল্যান্ডে পৌঁছলে সেখানকার মানুষরাও জানতে পারলেন এই বীভৎস প্রথার কথা। পরিণামে নীলচাষ প্রথা বন্ধ হয়। বাংলার চাষীরা এই মহাসংকট থেকে রক্ষা পায়।

দীনবন্ধু মিত্রের শ্রেষ্ঠ নাটক :

তার রচিত শ্রেষ্ঠ প্রহসন গুলি হল :

সধবার একাদশী (১৮৬৬) :

সধবার একাদশীর বিষয় — ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কলকাতার উচ্চশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের পানাসক্তি, লাম্পট্য, পরস্ত্রীহরণ প্রভৃতি চরিত্রভ্রষ্টতার কাহিনি। ‘সধবার একাদশী’র শ্রেষ্ঠ গুণ -এর একান্ত বাস্তব ও অপূর্ব ব্যঞ্জনাময় কথাবার্তা। কথোপকথনের ভঙ্গিও আকর্ষণীয়। চরিত্র চিত্রণও স্বাভাবিক। ঘটিরাম ডেপুটি, রামমাণিক্য, অটল, ভোলা, কাঞ্চন— প্রত্যেকটি চরিত্র বেশ জীবন্ত ও বাস্তবরূপে চিত্রিত।

দীনবন্ধু তাঁর পূর্বসূরি মধুসূদনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ঘটনা সন্নিবেশে, চরিত্রচিত্রণে ‘সধবার একাদশী’ অধিকতর পূর্ণাঙ্গ প্রহসন। এর নাটকীয় রস অনেক বেশি ঘনীভূত এবং চরিত্র সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় রয়েছে।

বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬) :

‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ মধুসূদনের ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনের অনুসরণে রচিত। এই প্রহসনে বিবাহ বাতিকগ্রস্ত এক বৃদ্ধের নকল বিয়ের আয়োজন করে স্কুলের অকাল পরিপক্ক ছেলেরা কিভাবে নাস্তানাবুদ করেছিল তারই কৌতুককর দৃশ্য বর্ণিত হয়েছে।

‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ নিখুঁত হাস্যরসপ্রধান প্রহসন হিসাবে একটি অপূর্ব সৃষ্টি। এর মধ্যে ধারালো কথার তীব্র ঝালক নেই। কোন গভীর সমাজ সমস্যার সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও নেই। হাস্যরসের অনর্গল ধারায় প্রহসনটি আগাগোড়া স্নিগ্ধ ও মধুর।

জামাই বারিক (১৮৭২) :

‘জামাই বারিক’ প্রহসনটি সমাজের বাস্তব সমস্যা অবলম্বনে রচিত। পূর্বে কুলীন জামাইরা নিষ্কর্মা ও বেকার অবস্থায় শশুরবাড়িতে থাকত। গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য শ্বশুরের উপর নির্ভর করতে হত বলে তারা সকলের কাছে হাস্যাস্পদ হত। এদের করুণ অবস্থা ও দুঃখের কথা দরদী নাট্যকার হাস্যরসের অনাবিল স্রোতের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। সপত্নী-ঈর্ষা, কলহপীড়িত দ্বিপত্নীক স্বামীর সমস্যা প্রহসনে আলোচিত। দীনবন্ধুর প্রহসনগুলির মধ্যে হাস্যরসের প্রাবল্য ‘জামাই বারিকে’ সবচেয়ে বেশি।

লীলাবতী (১৮৬৭) :

দীনবন্ধুর পরিণত ভাবনার ফসল। নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাতে ঘটনার দ্বন্দ্বে নাটকটি সার্থক। নাটকের বিষয় প্রেম; প্রেমের বিলাস ও বৈচিত্র্য নাটকে আছে। ব্রাহ্ম আন্দোলন ও স্ত্রীশিক্ষার প্রতি লেখকের পক্ষপাত স্পষ্ট। আগের নাটকের মতো কৌলীন্যপ্রথার অনিষ্টকর দিকটিও নাটকে দেখানো হয়েছে।

দীনবন্ধুর শেষ নাটক ‘কমলে কামিনী’ (১৮৭৩) যাতে ইতিহাসকে আনা হয়েছে ও ঐতিহাসিক গম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টির চেষ্টা আছে। কৌতুকরসের প্রকাশও কম নেই। তবু নাটক হিসেবে এটি উচ্চমানের নয়।

দীনবন্ধুর নাট্য রচনার বৈশিষ্ট্য

1. দীনবন্ধু বাংলা সাহিত্যের বাস্তবতার অগ্রদূত এবং তিনি বোধহয় বাংলা সাহিত্যের প্রধান বাস্তববাদী লেখক।

2. তখনকার মত এখনো বিভিন্ন রঙ্গমঞ্চে দীনবন্ধু নীলদর্পণ ও সধবার একাদশী অভিনীত হয়। বিশেষ করে নীলদর্পণের নাট্যকার হিসাবে তার খ্যাতি চূড়ান্ত।

3. দীনবন্ধুর শিল্প মানুষের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য তার বস্তু চেতনা, এই বস্তুচেতনার উৎস কিন্তু পুথির জগত বা চিন্তার জগৎ নয় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাজাত।

4. সব ধরনের নাট্য সৃষ্টিতে দীনবন্ধু সফল ট্রাজেডিটি কমেডি প্রহসন প্রতিটি সৃজনরূপেই দীনবন্ধুর প্রতিভা দীপ্ত।

5. উচ্চশ্রেণীর চরিত্রে দীনবন্ধু সফল না হলেও সাধারণ অতি সামান্য চরিত্রের অংকনে তিনি অত্যন্ত সফল, তার তোরাপ, আদুরী ইত্যাদি বাংলা সাহিত্যে অতুলনীয়।

দীনবন্ধুর নাট্যরচনার প্রেরণা দান করেছে বাঙ্গালীর শাশ্বত জীবন বোধ ও সমকালের বিক্ষুদ্ধ গণজীবন। সমসাময়িক বিক্ষুব্ধ গণজীবনের সঙ্গে একতা অনুভব করেছিলেন বলেই “নির্যাতিত জীবনের সহানুভূতিশীল বাণীকার” রূপে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্রের পরিচয় দাও।
গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কাব্যপ্রতিভার পরিচয় দাও।
মধুসূদন দত্তের রচিত দুটি প্রহসনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
সামাজিক উপন্যাস রচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।
সামাজিক উপন্যাস রচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।
মধুসূদন দত্তের রচিত দুটি প্রহসনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্রের পরিচয় দাও।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading