চর্যাপদ কে, কবে, কোথা থেকে আবিষ্কার করেন ? তিনি এই পুথিটির কী নামকরণ করেন?

চর্যাপদ কে, কবে, কোথা থেকে আবিষ্কার করেন ?

চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হয়। এটি আবিষ্কার করেন বিখ্যাত বাঙালি পণ্ডিত ও সাহিত্যিক ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে তিনি এই মূল্যবান পুঁথিটি আবিষ্কার করেন।

পুথিটির কী নামকরণ

ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং প্রাচীন পুঁথি ও পান্ডুলিপি সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগারে অনুসন্ধান চালানোর সময় তিনি চর্যাপদসহ আরও কিছু মূল্যবান প্রাচীন পান্ডুলিপি খুঁজে পান। এই আবিষ্কার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

চর্যাপদ সম্পর্কে বলা হয়, এটি বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত একটি কাব্যসংগ্রহ। এতে মোট ৫০টি পদ রয়েছে, যেগুলি বৌদ্ধ সহজিয়া দর্শন ও তন্ত্র সাধনার সাথে সম্পর্কিত। এই পদগুলি রচনার সময়কাল আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে ধরা হয়। চর্যাপদগুলি মূলত বৌদ্ধ ধর্মের মন্ত্র ও গানের সংকলন, যা সহজ ভাষায় রচিত এবং সাধনামূলক ভাবধারা প্রকাশ করে।

ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের এই পুথিটি আবিষ্কার করে এর নামকরণ করেন “হাজার বছরের পুরাণ বাঙলা গানের পুঁথি”। এই নামকরণ তার প্রাপ্ত চর্যাপদগুলির ভাষা ও বিষয়বস্তু দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে করা হয়। চর্যাপদগুলি রচনার ভাষা প্রাচীন বাংলা, যা মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়। এই পুঁথির আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, বাংলা ভাষার সাহিত্যিক ইতিহাস হাজার বছরেরও অধিক পুরনো।

চর্যাপদের কবিরা ছিলেন সিদ্ধাচার্য বা সিদ্ধ পুরুষ, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন লুইপা, কাহ্নপা, সারহপা, ভুসুকুপা, শবরপা ইত্যাদি। এদের প্রত্যেকের রচিত পদগুলিতে বৌদ্ধ তন্ত্র সাধনার গূঢ় তত্ত্ব ও সহজিয়া ভাবধারা প্রকাশিত হয়েছে। পদগুলি সরল ও বোধগম্য হলেও এর অন্তর্নিহিত অর্থ গভীর ও রহস্যময়।

ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর এই আবিষ্কার বাংলা সাহিত্য ও ভাষার ইতিহাসে এক অমূল্য সংযোজন। চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে শুধু সাহিত্যিক গুরুত্বই নয়, বরং ভাষাতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মূল শিকড়ের সন্ধান প্রদান করে, যা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এক গর্বের বিষয়।

চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি আবিষ্কারের পর ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তা সম্পাদনা ও ব্যাখ্যা করে প্রকাশ করেন, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার আদি রূপ ও বৌদ্ধ সাধনার সহজিয়া দর্শন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অনেক বৃদ্ধি পায়।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading