গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সামাজিক ও পৌরাণিক নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্র বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় রেখেছেন। উনিশ শতকে গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকগুলি পাঠক সমাজে বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল। গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে ‘প্রফুল্ল’ (১৮৮৯), ‘হারানিধি’ (১৮৯০), ‘মায়াবসান’ (১৮৯৭) ও ‘বলিদান’ (১৯০৫)

গিরিশচন্দ্রের অন্যতম সামাজিক নাটক ‘প্রফুল্ল’। শুধু গিরিশচন্দ্রেরই নয়, উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামাজিক নাটক ‘প্রফুল্ল’। একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙন নিয়ে এ নাটক রচিত হয়েছে। সামান্য ব্যাংক ফেলের ঘটনায় যোগেশের সাজানো সংসার কীভাবে ভেঙে গেল, তা নাট্যকার দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কন করেছেন। ‘আমার সাজানো বাগান শুকিয়ে গেল’ উনিশ শতকের নাট্যমোদী দর্শকদের মনে বিশেষ রস সঞ্চার করেছিল। নাটকটি বিবর্তিত হয়েছে যোগেশ চরিত্রকে কেন্দ্র করে, কিন্তু নামকরণে নারীচরিত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন নাট্যকার। তবে প্রফুল্লই নাটককে পরিপূর্ণতার পথে নিয়ে গেছে। এ নাটক সম্পর্কে সমালোচক অজিতকুমার ঘোষ লিখেছেন-‘প্রফুল্ল’ তাঁহার সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রসিদ্ধ সামাজিক নাটক। নাটকখানি রলামঞ্চে সম্বর্ধনা লাভ করিয়াছে এবং সমালোচকদের অকৃপণ প্রশংসাও ইহার ভাগ্যে জুটিয়াছে।”

গিরিশচন্দ্রের অন্যতম সামাজিক নাটক ‘বলিদান’। বাঙালি সমাজে কন্যার বিবাহের সমস্যাকে কেন্দ্র করে এ নাটক গড়ে উঠেছে। পণপ্রথার বলি হতে হয়েছে পিতা করুণাময়কে। শ্বশুরবাড়িতে কন্যার ওপর অত্যাচার, কন্যার পিত্রালয়ে ফিরে আসা সব তিনি দেখিয়েছেন। নাটকের শেষে করুণাময় জীবনের অন্তর্ঘাতে পৌঁছেছেন-“বাঙ্গালায় কন্যা সম্প্রদান নয়-বলিদান।” এ নাটকে ট্র্যাজেডির সুর ধ্বনিত হয়েছে। এমনকি এ নাটকের গানগুলি সামাজিক ক্ষত থেকেই উঠে এসেছে। এ নাটক সম্পর্কে সমালোচক অজিতকুমার ঘোষ লিখেছেন-“বলিদান’ নাটকে গিরিশচন্দ্র সমাজের এক অতি বাস্তব ও বেদনাজনক সমস্যার অবতারণা করিয়াছেন। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে কন্যাদানের প্রকৃত অর্থ যে বলিদান তাহাই নাট্যকার এ নাটকে দেখাইতে চাহিয়াছেন।” উনিশ শতকে গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকগুলি রঙ্গমঞ্চে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। আসলে গিরিশচন্দ্র রঙ্গমঞ্চের দিকে তাকিয়ে নাটকগুলি লিখেছিলেন, ফলে নাটকগুলি তার নাট্যগুণ অপেক্ষা রস সঞ্চারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading